অর্থ ব্যয় ও জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফসল উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ সোমবার (২৫শে জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বিস্তারিত জানান।

তিনি বলেন, খরচ কমাতে প্রধানমন্ত্রী আজও পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছেন। এজন্য আমাদের প্রকল্পগুলোর ক্যাটাগরি করা হয়েছে- এ, বি, সি। ‘এ’ ক্যাটাগরির যেগুলো সেগুলো ইমিডিয়েটলি প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুরুত্ব অনুযায়ী প্রকল্পগুলোকে ‘এ’, কোনগুলো ‘বি’ ও কোনগুলো ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ফেলবে। ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রকল্পের পুরো টাকা খরচ করা যাবে। ‘বি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোতে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করা যাবে। আর ‘সি’ ক্যাটাগরির প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন স্থগিত থাকবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কেনাকাটাতে যথাসম্ভব যেগুলো ইমিডিয়েট, না কিনলে হবে না, সেই জাতীয় কেনাকাটা চলবে। যেগুলো আপাতত না কিনলেও চলবে, সেসব কেনাকাটা আপাতত স্থগিত থাকবে।

বিদেশে প্রশিক্ষণের বিষয়ে তো এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রেজারি থেকে বিল হয় এমন কোনো বিদেশভ্রমণ এখন মন্ত্রণালয়গুলো করতে পারবে না। সরকারি টাকায় সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।

তবে দরপত্রে থাকা দরদাতার ব্যয়ে প্রযুক্তি স্থানান্তর সংক্রান্ত যে বিদেশ সফর রয়েছে সেগুলো বন্ধ থাকবে না বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে খুবই জোর দিয়েছেন। বিশেষ করে কোথাও কোথাও যদি এক ফসলি জমি থাকে, সেখানে তিন ফসল করার বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। বাড়ির উঠানে শাকসবজি এগুলো করতে হবে।

তিনি বলেন, সবাইকে একটু সহযোগিতা করার জন্য উনি (প্রধানমন্ত্রী) বিশেষ অনুরোধ করেছেন। কারণ এটা আমরা জানি না, কালকে-পরশু চুক্তি হলো, কালকেই আবার ইউক্রেনের ওদেসা বন্দরে বোমাবর্ষণ হয়েছে। চুক্তি হয়েছে ইউক্রেন থেকে খাবারটা বেরিয়ে আসবে। বন্দর ছাড়া আসবে কীভাবে? এটা তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে না। সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে খাবার ও সার নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আমাদের জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে হবে।

‘আমাদের বার বার অনুরোধ করা হয়েছে। যেভাবে হোক আমরা যেন সাশ্রয়ী হই। অহেতুক এনার্জি ও টাকা-পয়সা খরচ না করি। আমি এরই মধ্যে আমার অফিস রুমে জানালার পর্দা তুলে দিয়েছি, ছোট লাইটগুলো বন্ধ রাখছি।’

সরকারি-বেসরকারি গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

টানা করোনাভাইরাস মহামারি ও সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ব্যয় সাশ্রয় করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানির সাশ্রয় ও রিজার্ভ রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ।

এর মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয় কমাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটখাতে বরাদ্দ অর্থ সাশ্রয় ও হ্রাস করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আবার জ্বালানির ব্যবহার কমাতে মন্ত্রীদের গাড়ি নিয়ে বেশি ছোটাছুটি না করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারি সব দপ্তরে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবদের সভায় নেওয়া হয় এই সিদ্ধান্ত। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়েও ব্যয় সাশ্রয়ে নানা রকমের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিন, এভিডেন্স অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট-২০২২ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদে চরিত্রহননের প্রবণতা রোধ করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভিকটিমকে ব্যক্তিগত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। ডিজিটাল ডাটা, তথ্য এগুলোও সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহন করা যাবে।

এছাড়া বাংলাদেশ শিল্প নকশা আইন ২০২২ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক দিয়ে তৈরি নকশা পেটেন্টের জন্য আবেদন করতে পারবে না।

রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হচ্ছে, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের জাহাজ। প্রাথমিকভাবে চারমাসের মধ্যে সব জাহাজকে নম্বর দিয়ে রঙ দিয়ে নির্দিষ্ট করা হবে।