সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) পাস হওয়ার চার বছর পর কার্যকরের ঘোষণা দিল ভারত। সোমবার (১১ মার্চ) দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনটি কার্যকরের কথা জানায়। লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বিতর্কিত এ আইনটি কার্যকর করা হলো। এই আইনটিকে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি আন্দোলনও হয়েছে।

২০১৯ সালে সিটিজেন শিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট-সিএএ নামের বিতর্কিত সংশোধনী আইনটি পাস করে মোদির সরকার। এই আইন অনুযায়ী, যে হিন্দু, পারসি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিস্টানরা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে পালিয়ে গিয়েছে, তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য। তবে, মুসলমান সম্প্রদায়কে আইনের আওতার বাইরে রাখার জন্য এই আইনটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ হিসেবে শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিলো। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা থেকে যাওয়া তামিলনাড়ুর শরণার্থীরা বঞ্চিত হওয়ায় বিতর্কের জন্ম দেয়।

এ নিয়ে দেশটিতে শুরু হয় অশান্তি। সেসময় দিল্লিতে দীর্ঘদিন অবরোধ চলেছে। দাঙ্গাও হয়েছে। সারা ভারতে প্রতিবাদ হয়েছে। বিক্ষোভ – সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। গ্রেপ্তার হয়েছে অনেক। দেশব্যাপী বিক্ষোভের পর মোদি সরকার আইনটির জন্য বিধিমালা তৈরি করেনি। এ বার লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই আইনটিই কার্যকর করা হলো।

সোমবার (১১ মার্চ) সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে মোদি সরকার।’ তিনি বলেন, ‘এটা ছিল বিজেপির ২০১৯ সালের (নির্বাচনি) ইশতেহারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি নির্যাতিতদের ভারতে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সুগম করবে।’

মোদি সরকার আরও বলেছে, আইনটি নাগরিকত্ব প্রদানের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এটি কারও কাছ থেকে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়। আইনটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছে তারা।

এদিকে, আইনটি কার্যকর করার কঠোর সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। সোমবার সন্ধ্যায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কেন চার বছর ফেলে রাখার পর এই সময়ই সিএএ বাস্তবায়িত হতে চলেছে, তা আমরা বুঝতে পারি।’ এই আইনের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না বলে রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন মমতা।

সিএএ এর কার্যকরের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কর্ণাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিভকুমার। বলেছেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সিদ্ধান্ত মোটেই শোভনীয় হয়নি, দেশে নাগরিক্ত আইনের  এই সংশোধনীর কোন প্রয়োজনই নাই।

ধর্মের বিচারে নাগরিকত্ব দেয়ার সিদ্ধান্তটি ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। দলটির নেতা দিগবিজয় সিং বলেছেন দেশের ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোই সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য।

অন্যদিকে, সিএএ কার্যকরের ঘোষণা করার পর থেকেই এরই মধ্যে অশান্তি বিরাজ করছে দেশটিতে। বিক্ষোভ হয়েছে কোথাও কোথাও। সোমবার রাতেই আসামের বিভিন্ন প্রান্তে সিএএর অনুলিপি পোড়ানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যজুড়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।