ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে তলিয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা। সড়কসহ অলিগলি হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে। জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী। রাত থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২০৫ দশমিক শূন্য চার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রোববার মধ্যরাত থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে নগরীতে। তাতে ডুবেছে নগরীর নিচু এলাকাগুলো।   কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও কোমর সমান- পানিতে তলিয়েছে নগরীর বহাদ্দার হাট, বাদুরতলা, চকবাজার, কাপাসগোলা, মুরাদপুর, বাকলিয়া, প্রবর্তক মোড়, আগ্রাবাদ, সিডিএ ও হালিশহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অলিগলি। সড়ক ছাড়িয়ে দোকান, বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় ভোগান্তির শেষ নেই নগরবাসীর।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর, চকবাজার, ডি সি রোড, কে বি আমান আলী রোড, বাকলিয়া, দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, প্রবর্তক মোড়, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, এম এম আলী রোড পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া হালিশহর, শুলকবহর, মির্জাপুল, ওয়াসা মোড়, তিন পোলের মাথা, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকাও পানিতে তলিয়ে যায়।

জলাবদ্ধতার কারণে অনেকে কর্মস্থলে যেতে পারেননি। আবার অনেকে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানিও জমেছে। অনেককে আবার এই পানি মাড়িয়ে কর্মস্থলে ছুটতে দেখা গেছে। বিঘ্নিত হয় বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য।

প্রবর্তক মোড় এলাকায় দেখা যায় কোমর সমান পানি ঠেলে রিকশা টেনে নিচ্ছেন চালকরা। পথচারীরা কেউ কেউ সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে হেঁটে মোড় পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও সেই আইল্যান্ডও ডুবে আছে পানিতে। বিভিন্ন এলাকার খাল ও নালা উপচে পানি বয়ে যাচ্ছে সড়কের উপর দিয়ে।

মুরাদপুরের ষোলকবহর এলাকার বাসিকা গিয়াস উদ্দিন কাজ করেন একটি গার্মেন্টসে। তিনি বলেন, ‘রাস্তার হাঁটুর কাছাকাছি পানি উঠে গেছে। কিন্তু এর মধ্যে অফিসে যেতে হয়েছে, কিছু করার নেই।’

চকবাজারের কে বি আমান আলী রোডের বাসিন্দা ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘আমি নিচ তলায় ভাড়া থাকি। সকাল হতেই ঘুরে পানি ঢুকেছে। এজন্য আজ অফিসেও যেতে পারিনি।’

তাছাড়া, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নগরের উপকূলীয় এলাকা পতেঙ্গার আকমল আলী রোড সংলগ্ন জেলেপাড়া অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। এতে সেখানকার প্রায় ৩০০ পরিবার দুর্ভোগে পড়ে বলে জানা গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল দুর্বল হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে দেওয়া ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই চার বন্দরে এখন ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত চলছে।

এ বিষয়ে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা এমএইচএম মোসাদ্দেক বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে চট্টগ্রামের ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী দুই দিন টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও পাহাড় ধস হতে পারে।

এদিকে, সোমবার ভোর ৫টা থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু করা হয়। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে রোববার দুপুর ১২টা থেকে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ছিল।

এছাড়া, ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ১৭ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হয়েছে। সোমবার (২৭ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যান চলাচলের জন্য খুলে নেওয়া হয় টানেল। কর্ণফুলী টানেল সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী (টোল, ট্রাফিক ও ইএমই) মো. নজরুল ইসলাম এই তথ্য জানিয়েছে।