আমরা প্রায় সবাই নিয়মিত-অনিয়মিত ভাবে দুধ খেয়ে থাকি। দুধের উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু খাঁটি দুধ সর্বত্র মেলে না। ক্রমশ বেড়ে চলেছে ভেজাল দুধের দৌরাত্ম। দুধ যদি ভেজাল হয় তাতে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হবে।এক সময় শুধু পানি মিশিয়ে ভেজাল করা হলেও, বর্তমানে গরুর দুধে ডিটারজেন্ট পাউডার, ফরমালিন, গ্লুকোজ, সাবানসহ নানাকিছু মেশানো হচ্ছে।

দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি, ঘনত্ব বৃদ্ধি, দীর্ঘস্থায়িত্ব বৃদ্ধি কিংবা স্বাদ অপরিবর্তিত রাখার জন্য এসব রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ খাঁটি দুধের পরিবর্তে সরবরাহ করা হচ্ছে রাসায়নিক দুধ। ভেজাল দুধ উপকারের পরিবর্তে সৃষ্টি করছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই খাঁটি দুধ খাওয়ার জন্য সবার আগে আপনাকে জানতে হবে কোনটি ভেজাল দুধ।

জেনে নিতে পারেন ভেজাল দুধ চেনার উপায়-

১. দুধে পানি মেশানো হয়েছে কিনা জানার উপায়: ঢালু কোনো মসৃণ পৃষ্ঠের ওপর কয়েক ফোঁটা দুধ ফেলুন। খাঁটি দুধ হলে তা আস্তে আস্তে গড়িয়ে যাবে এবং দুধের সাদা দাগ দেখা যাবে। ভেজাল হলে দুধ দ্রুত গড়িয়ে যাবে এবং সাদা দাগ দেখা যাবে না।

২. দুধে ডিটারজেন্ট পাউডার মেশানো হয়েছে কিনা জানার উপায়: একটি গ্লাসে ৫ থেকে ১০ মিলিলিটার দুধ এবং সমপরিমাণ পানি নিয়ে কিছুক্ষণ ঝাঁকান। যদি ডিটারজেন্ট পাউডার মেশানো দুধ হয় তাহলে তাতে ঘন ফেনা দেখা যাবে। খাঁটি দুধে খুব পাতলা ফেনা সৃষ্টি হবে।

৩. দুধে স্টার্চ (মাওয়া, পনির) মেশানো হয়েছে কিনা জানার উপায়: একটি পাত্রে ২/৩ মিলিলিটার দুধের সঙ্গে ৫ মিলিলিটার পানি মিশিয়ে ফুটান। এরপর ঠান্ডা করে এতে ২-৩ ফোঁটা আয়োডিন টিনকিউর দিন। যদি দুধের রঙ নীলচে হয়, তাহলে বুঝবেন দুধ ভেজাল। আয়োডিন টিনকিউর ওষুধের দোকান থেকে সহজেই কিনে নিতে পারবেন।

৪. দুধে ফরমালিন মেশানো হয়েছে কিনা জানার উপায়: একটি কাচের গ্লাসে ১০ মিলিলিটার দুধ নিন এবং এতে ৫ মিলিলিটার সালফিউরিক অ্যাসিড যুক্ত করুন। যদি বেগুনি বা নীল রঙ প্রদর্শিত হয় তাহলে বুঝতে হবে দুধে ফরমালিন মেশানো হয়েছে। দুধ দীর্ঘদিন নষ্ট না হওয়ার জন্য এতে ফরমালিন মেশানো হয়, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ফরমালিন মিশ্রিত দুধ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

৫. দুধে ইউরিয়া মেশানো হয়েছে কিনা জানার উপায়: একটি কাচের গ্লাসে এক চা-চামচ দুধ নিন। এবার এতে হাফ চা-চামচ সয়াবিন বা অড়হর পাউডার মিশিয়ে মিশ্রণটি ঝাঁকান। ৫ মিনিট পর এতে একটি লাল লিটমাস পেপার ডুবান। ৩০ সেকেন্ড পর পেপারটি তুলে ফেলুন। যদি দেখেন লাল লিটমাস পেপারের ডুবানো অংশটি নীলচে রঙ ধারণ করেছে, তাহলে বুঝবেন দুধে ইউরিয়া মেশানো হয়েছে।

৬. দুধে ডালডা মেশানো হয়েছে কিনা জানার উপায়: একটি কাচের গ্লাসে তিন মিলিলিটার দুধ নিন। এবার এতে ১০ ফোঁটা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এবং ১ চা-চামচ চিনি যুক্ত করুন। ৫ মিনিট পর যদি দেখেন মিশ্রণটি লাল রঙের হয়ে গেছে, তাহলে বুঝবেন দুধে ডালডা মেশানো হয়েছে।

৭. কৃত্রিম দুধ কিনা জানার উপায়: উচ্চ মাত্রার ভেজাল দিয়ে খাঁটি দুধের আদলে তৈরি করা হয় কৃত্রিম দুধ, যা সিনথেটিক দুধ হিসেবে পরিচিত। সিনথেটিক দুধের স্বাদ তেতো। সহজেই এই ভেজাল দুধ চেনার উপায় হচ্ছে, হাতের আঙুলে নিয়ে একটু ঘষলে সাবানের মতো অনুভূতি হবে। এছাড়া দুধ গরম করার পর হলদেটে রঙ ধারণ করবে।

জেনে রাখুন – সুস্থ থাকার জন্য যেসব খাবার নিয়মিত খেতে হবে, তার মধ্যে একটি হলো দুধ। অনেকে বেশি পুষ্টির আশায় কাঁচা দুধ খেয়ে থাকেন। নানা পুষ্টিগুণে ভরা দুধ খাওয়ার উপকারিতার কথা কম-বেশি সবারই জানা। কিন্তু বেশি পুষ্টির আশায় কাঁচা দুধ খেলে কি সত্যি উপকার মেলে? নাকি লাভের আশায় খেতে গিয়ে ক্ষতিই হয় বেশি?