জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গতরাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে এই সংঘর্ষ হয়। এসময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় শিক্ষকসহ উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হয়েছে। এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরাও আহত হয়েছেন।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবীতে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় জাবি কেন্দ্রিয় পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এসময় বিক্ষোভ মিছিলটি জাবি বঙ্গবন্ধু হল ও বটতলা অতিক্রম করার সময় মিছিলের উপর লাঠি, শোটা নিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। দফায় দফায় চলে সে হামলা। এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনও আহত হন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাত ৯টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা হামলার বিচারে দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় বহিরাগতদের নিয়ে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা চালায়। আত্মরক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে আশ্রয় নেন। এ সময় উপাচার্য বাসভবনে ছিলেন। সেখানে আশ্রয় নেওয়া আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দুটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকের লাইটসহ বিভিন্ন লাইট ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে ফটক ভেঙে উপাচার্যের বাসভবনে ঢুকে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
পরে রাত সোয়া দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্য বাসভবনের দিকে যান। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন তারা। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
এর আগে, সোমবার সন্ধ্যার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় তাদের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনার প্রথম থমথমে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহের হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা করেছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আবদুল্লাহ হিল কাফী বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সর্বাত্মক সচেষ্ট রয়েছে পুলিশ।
এদিকে, হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে শাখা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীতের ওপর হামলা করিনি, আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।’