আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মধ্যকার ফাঁস হওয়া ফোনালাপের বিষয়বস্তু জাতির সামনে উপস্থাপন করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই দাবি জানান।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও মন্ত্রীর ফোনালাপ ফাঁসের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয় এই সরকারের অনেক বেতন পাওয়া একজন উপদেষ্টা। তার একটা প্রজেক্ট পাস করার জন্য মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে বিচারককে পর্যন্ত সম্পৃক্ত করা হয়েছে। দুইজন বিচারকের নাম বলা হয়েছে। সচিবালয়ে ফাইল মুভমেন্ট করার কথা বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা জানতে চাই, ফোনালাপে কী বলা হয়েছে? মন্ত্রী নিজে বলেছেন, এই ফোনালাপ কীভাবে ফাঁস হলো তার তদন্ত করা হবে। অর্থাৎ, তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন এই কথোপকথন সত্য। আমরা দাবি করছি, ফোনালাপে যেসব বিষয়ে কথা বলা হয়েছে তার তদন্ত হোক। আমরা জানতে চাই, এই বিশেষ প্রজেক্ট, ব্রেইন চাইল্ড প্রজেক্ট এবং অন্যান্য যে বিষয়গুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে তা জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। না হলে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যেই দেশের মানুষ গণতন্ত্র চেয়েছে, সেই দেশকে আজ আন্তর্জাতিকভাবে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। কত বড় লজ্জার কথা। আজ বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কিছু কর্মকর্তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কারণ, তারা এই সরকারের নির্দেশে গুম, খুন করছে।

তিনি আরও বলেন, এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হলে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করে একটা জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

দেশ এখন দুর্নীতিতে ভরে গেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মকর্তা, যিনি অনেকগুলো দুর্নীতির মামলা দেখেছেন, তাকে সরিয়ে (চাকরি থেকে অব্যাহতি) দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, দুর্নীতি দমন কমিশনকে আজ পুরোপুরি দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে।

সময় খুব কম, দ্রুত নিজেদের সংগঠিত করতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অতি দ্রুত এই ভয়াবহ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামতে হবে। এই সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না। বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এই অবস্থায় ৫২-র ভাষা আন্দোলন ও ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমাদের রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার তারা নষ্ট করে দিয়েছে। বাংলাদেশের আত্মাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশে লুটপাটের রাজত্ব তৈরি করেছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখনো কারাগারে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যিনি ১৯৮১ সালের পর থেকে নতুন করে গণতন্ত্রকে জাগিয়ে তুলেছেন, যিনি ৯ বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, সেই নেত্রী খালেদা জিয়াকে এখনো কারাগারে আটকে রেখেছেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বারবার আবেদন করা হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিদিন আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জামিন পেতে কোর্টে যেতে হচ্ছে। আজও ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির নেতা আব্দুস সালাম, উত্তরের নেতা আমিনুল হকসহ অনেকে এই আলোচনা সভায় আসার আগে কোর্টে গিয়েছেন জামিন আনার জন্য। আমি অবিলম্বে খালেদা জিয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

সরকার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, যে ভাষার জন্য বাঙালি প্রাণ দিয়েছে, সেই বাংলা ভাষাকে আমরা সব স্তরে চালু করতে পেরেছি? পারিনি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সবচেয়ে যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি, তা হলো বাংলা ভাষা ধীরে ধীরে সেখান থেকে চলে যাচ্ছে। আমাদের সন্তানরা ভিন্ন পরিস্থিতিতে, ভিন্ন ভাষায় লেখাপড়া করছে। অনেকেই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি আমরা আশা করিনি। এই সরকার বাংলাদেশের যে আলাদা পরিচিতি ছিল সেটি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দেশবাসীকে ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ার আহ্বান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করতে হবে। সরকারের পতন ঘটাতে ঐক্য গড়ে কঠোর শপথ নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে লড়তে হবে। বর্তমান সংকটের সমাধান একটাই। এই সরকারের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হবে। সরকারকে বিদায় করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তা না হলে খালেদা জিয়াও মুক্ত হবেন না। এর জন্য সাহসের প্রয়োজন। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে মাথা নত না করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

নেতা-কর্মীদের মুহুর্মুহু স্লোগানে বিরক্ত হয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, স্লোগান দিয়ে কী বোঝাতে চান? স্লোগানে মিটিংয়ের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। কোথায় কোন স্লোগান দিতে হয় তাও আপনারা জানেন না। স্লোগান দিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। রাজপথে স্লোগান দিয়ে, রক্ত দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, এই শপথ নিতে হবে।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।