প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নে এবং মাদকমুক্ত দেশ ও সমাজ গঠনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এ বাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ দেশের যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং দেশ গঠন ও বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। সাম্প্রতিককালে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান, উদ্ধার তৎপরতা ও আশপাশের এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে।
তিনি বলেন, আমি আশা করি, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে এ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সততা, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালন করবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ বিজিবি ২২৮ বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী বাহিনী। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের দিকনির্দেশনায় এ বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিক প্রস্তুতি শুরু করেন। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআর’র ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আপামর জনসাধারণের সঙ্গে এ বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের জন্য এ বাহিনীর দু’জন বীরশ্রেষ্ঠসহ ১১৯ জন মুক্তিযোদ্ধা সদস্য খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ৮১৭ জন অকুতোভয় সদস্য তাদের জীবন উৎসর্গ করে বিজিবি’র ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছেন।
তিনি তাদের এ আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, ২০০৮ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ অর্জন মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর বিশেষ অবদানেরই অনন্য স্বীকৃতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস এর ৩য় ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের ভাষণে নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে বলেছিলেন- “ঈমানের সাথে কাজ করো, সৎ পথে থেকো, দেশকে ভালোবাসো।” জাতির পিতার আহ্বানে উজ্জীবিত হয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যগণ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি সীমান্ত অপরাধ দমন, চোরাচালান প্রতিরোধ, মানব ও মাদক পাচাররোধে অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এ বাহিনীকে যুগোপযোগী ও আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। এলক্ষ্যে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন ২০১০’ প্রণয়নসহ ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ এর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাহিনীর পুনর্গঠন ও কমান্ডস্তর বিকেন্দ্রীকরণের জন্য নতুন নতুন রিজিয়ন, সেক্টর, ব্যাটালিয়ন ও বিওপি স্থাপন করে প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাহিনীর জনবল ৯২ হাজারে উন্নীত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, সীমান্তে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পেশাগত উৎকর্ষতার কোনো বিকল্প নেই। উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ’ সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সংবলিত আরো একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তার সরকার নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে অত্যাধুনিক এমআই-১৭১-ই প্রযুক্তির হেলিকপ্টার, অত্যাধুনিক এন্টিট্যাংক গাইডেড উইপন, আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, অল টেরেইন ভেহিক্যাল (এটিভি) এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন সিরিজের হাইস্পিড ইন্টারসেপ্টার জলযান ও এয়ারবোট সংযোজন করে বিজিবিকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। কম্পোজিট বিওপি নির্মাণের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করা হয়েছে।
আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সীমান্তে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এলাকায় ‘স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স এন্ড ট্যাকটিকাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পার্বত্য সীমান্ত ও দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের জন্য ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ ও পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। আভিযানিক দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৈনিকদের দৈনন্দিন জীবনযাপন সহজ ও সুন্দর করার জন্য সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনাকে সুসংহত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবসের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।