একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার খন্দকার গোলাম ছাব্বির আহমাদসহ পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

আজ (সোমবার) আন্তর্জাতিক অপরাধ  ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। অপর দুই সদস্য বিচারপতি হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।

এর আগে গত ১৬ই ফেব্র“য়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের এ মামলায় রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।

গত বছরের ২৩শে নভেম্বর এই মামলায় রাষ্ট্র ও আসামি উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষামাণ রাখা হয়।

আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন ও ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও গাজী এম এইচ তামিম।

প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন বলেন, এ মামলায় আসামি আটজন। এরমধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনজন মারা গেছেন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আব্দুল হান্নান, তার ছেলে মো. রফিক সাজ্জাদ (৬২) ও মিজানুর রহমান মিন্টু (৬৩)। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন- মো. হরমুজ আলী (৭৩), মো. আব্দুস সাত্তার (৬১) ও খন্দকার গোলাম রব্বানী (৬৩)। আর দুইজন আসামি পলাতক। তারা হলেন- ডা. খন্দকার গোলাম ছাব্বির আহমাদ (৬৯) ও মো. ফখরুজ্জামান (৬১)।

২০১৮ সালের চৌঠা নভেম্বর মামলায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এম এ হান্নান ও তার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এরমধ্যে মামলার আইওসহ ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

২০১৬ সালের ১১ই জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা আসামিদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেয়। আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা ও মরদেহ গুম- এই সাত ধরনের অপরাধের ছয়টি অভিযোগ আনা হয়।

২০১৫ সালের ১০ই অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করলে ওইদিনই হান্নানকে গুলশানে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন তার ছেলে রফিক সাজ্জাদকে ওই এলাকার একটি অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের (২০১৫ সালের) ১৯শে মে ত্রিশালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন এ মামলা করেন। ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক পরে এজাহারটি গ্রহণ করে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন।

একই অভিযোগে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আনিছুর রহমান (৭০) এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ হান্নানসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অন্য একটি মামলা করা হয়।

২০১৬ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ ৩ নম্বর আমলি আদালতে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম (৬৮) বাদী হয়ে এ মামলা করেন। পরে ৩ নম্বর আমলি আদালতে বিচারক মিটফুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালের ২১শে এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন শান্তি কমিটির ময়মনসিংহ শহর শাখার আহ্বায়ক ছিলেন এম এ হান্নান। তার নির্দেশে রাজাকার কমান্ডার আনিসুর রহমান মানিক ও সামসুল হক বাচ্চুসহ পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা ত্রিশালের কালির বাজার ও কানিহারী এলাকায় শতাধিক গণহত্যা, কয়েক কোটি টাকার সম্পদ লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ করেন।