হবিগঞ্জের শফিউদ্দিনসহ ৫ আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ৩০শে জুন ধার্য করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার (২৮শে জুন) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই দিন নির্ধারণ করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মো. তাজুল ইসলাম, মো. জাহেদ মিয়া, ছালেক মিয়া ও সাব্বির আহমেদ। তাদের মধ্যে মাওলানা শফি উদ্দিন ও সাব্বির আহমেদ পলাতক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছ তাদের বিরুদ্ধে। এর আগে গত ১৭ মে প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানির পর এর ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য অপেক্ষায় রেখেছিলেন। ওইদিন আদালত রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন। আসামিপক্ষে শুনানি করেন আব্দুস সাত্তার পালোয়ান, গাজী তামিম।
২০১৮ সালের ২১শে মার্চ এই মামলায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে প্রসিকিউশনে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। যাচাই-বাছাই শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনতে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করে প্রসিকিউশন।
এরপর পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যার মতো বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হলো:
১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর রাত ২টার সময় আসামি মাওলানা মো. শফি উদ্দিন, মো. তাজুল ইসলাম ও মো. জাহিদ মিয়া তাদের সঙ্গীয় অন্যান্য রাজাকার ও একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে লাখাই থানাধীন মুড়িয়াউক গ্রামে এমএনএ মোস্তফা আলীর (আওয়ামী লীগ সমর্থক) বাড়িসহ প্রতিবেশী ১০/১২টি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে এবং গান পাউডার ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগ করে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।
১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর রাত ৩টার সময় আসামি মো. শফি উদ্দিন মাওলানা, মো. তাজুল ইসলাম ও মো. জাহিদ মিয়া তাদের সঙ্গীয় অন্যান্য রাজাকার ও একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে লাখাই থানাধীন মুড়িয়াউক গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মো. ইলিয়াস কামালের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা মো. ইদ্রিস মিয়াকে অপহরণ করে হাত-পিঠমোড়া করে বেঁধে নিয়ে একই গ্রামের শান্তি কমিটির সদস্য ইসমাইল মাওলানার বাড়িতে নিয়ে আটক ও নির্যাতন করে।
একই সময় আসামি মো. শফি উদ্দিন মাওলানা, মো. তাজুল ইসলাম ও মো. জাহিদ মিয়া তাদের সঙ্গীয় অন্যান্য রাজাকার ও একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে লাখাই থানাধীন মুড়িয়াউক গ্রামের আব্দুল জব্বারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহানকে খোঁজাখুঁজি করে। তাকে না পেয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানের বৃদ্ধ বাবা আব্দুল জব্বারকে অপহরণ করে একই গ্রামের শান্তি কমিটির সদস্য ইসমাইল মাওলানার বাড়িতে আটক ও নির্যাতন করে। একই দিন বিকেলে উক্ত রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মিরা অপহৃত ইদ্রিস মিয়া ও আব্দুল জব্বারকে নৌকাযোগে লাখাই থানাধীন (আসামি মো. শফি উদ্দিন মাওলানার বাড়ির নিকট) উজাদার বিলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ পানিতে ফেলে দেয়।