প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যখনই এদেশের মানুষ ভালো থাকে, ভালো অবস্থানে আসে, তখনই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। একটা শ্রেণী রয়েছে এদেশে, যারা এদেশের মানুষের কল্যাণ চায় না। স্বাধীনতা অর্থবহ হোক, স্বাধীনতার সুফল মানুষ পাক, তা চায় না। এক্ষেত্রে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়।

আজ রবিবার (১৪ই আগস্ট) আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে আমাদের বিরোধী দল একটু সুযোগ পাচ্ছে। তারা আন্দোলন করবে, করুক। আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি- খবরদার যারা আন্দোলন করছেন, তাদের কাউকে যেন গ্রেফতার বা ডিস্টার্ব না করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘তারা প্রধানমন্ত্রীর অফিস ঘেরাও দেবেন, আমি বলেছি- হ্যাঁ আসতে দেবো। কেননা আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করছি দেশের জন্য কাজ করতে। মানুষ তো সেটা জানে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিএনপি) আন্দোলন করে কতটুকু সফল হবেন জানি না। তবে তারা যেভাবে করতে চাচ্ছেন, তাতে দেশের জন্য আরও ক্ষতি হবে। কিন্তু সেটা আমরা সামাল দিতে পারবো, সেই বিশ্বাস আমার আছে। হয়তো আরও কিছুদিন আমাদের কষ্ট করতে হবে।’

বিশ্বব্যাপী চলমান মন্দার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের আন্দোলন হতে পারে। কিন্তু বাড়াবাড়ি দেশের ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের কষ্ট বাড়াবে, যেটা তাদেরও বোঝা উচিত।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিরোধী দলসহ নানা জনে, নানা কথা বলবে। সুযোগ নেওয়ারও চেষ্টা করবে। তবে তারা যদি এসব বেশি করতে যায়, তাহলে তার প্রভাবে মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। এটাও তাদের বোঝা উচিত।’

জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার আন্তরিক জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মানুষের কষ্ট যে হচ্ছে, সেটা সরকারও উপলব্ধি করতে পারছে। এজন্য প্রতিনিয়ত সেই কষ্ট লাঘবের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশেও সমন্বয় করা হবে। যখনই বিশ্ববাজারে দাম কমবে, আমরা দ্রুত অ্যাডজাস্ট করবো। সেই নির্দেশনাও দেওয়া আছে। দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের এ সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।’

এসময় প্রধানমন্ত্রী সমসাময়িক সংকট কাটাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন কমিয়ে আনায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।

উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা মহামারি যেতে না যেতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনে জনজীবনে সর্বনাশ ডেকে আনছে। এতে ভুক্তভোগী হচ্ছেন সারা বিশ্বের মানুষ।’

প্রধানমন্ত্র আরও বলেন, ‘আর আমাদের কিছু লোক তো থাকেনই, যারা অপ্রয়োজনেও জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেন ওই ছুতো ধরে। সেটাও হচ্ছে কিছু কিছু। না হলে এত দাম তো বাড়ার কথা নয়।’

১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার শুধু একটাই প্রশ্ন জাগে মনে, আমার বাবা মা ভাই বোন কী অপরাধ করেছিল, কেন তাদেরকে হত্যা করা হলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপনিবেশিক শাসনামলের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তিনি তৃণমূলের মানুষের কাছে ক্ষমতা নিতে চেয়েছিলেন।

তিনি বলেন, মনে হয় এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ যদি অবদান রাখতে যায়, তাকে বিপর্যয়ে পড়তে হয়। এটাই বাস্তবতা। এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের।