দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দেশে চালু হয়েছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর আজ থেকে সীমিত পরিসরে মেট্রোরেলে যাতায়াত করছেন সাধারণ যাত্রীরা। এনিয়ে স্টেশনে যাত্রীদের দীর্ঘলাইন ও সমাগমে এক ধরণের উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে আগারগাঁও এবং উত্তরার দিয়াবাড়ি স্টেশন।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে রাজধানীর আগারগাঁও স্টেশন থেকে যাত্রীরা মেট্রোরেলে চড়ে যাচ্ছেন উত্তরা দিয়াবাড়ি স্টেশন পর্যন্ত। প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে যাত্রা করছেন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্র শাকিব। তিনি বলেন, আগে যেমন রাজধানীতে যানজট ছিল, আশা করছি মেট্রোরেলের কারণে তা কমে যাবে। রাজধানীবাসী খুব অল্প সময়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে পৌঁছাতে পারবেন।
সাবরিনা নামের অন্য এক যাত্রী বলেন, মেট্রোরেলে চরে দিয়াবাড়ি যাচ্ছি। কীভাবে বানানো হলো ও কতটা উন্নত, তা দেখতে যাচ্ছি। আজ একাই যাচ্ছি, পরবর্তীতে পরিবারদের সদস্যদের নিয়ে যাব।তিনি আরও বলেন, বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের প্রথম ট্রিপে যেতে পেরে খুব আনন্দ ও খুশি লাগছে।
আজ আগারগাঁও থেকে প্রথম ট্রেনটি ছেড়ে যায় সকাল ৮টা ১৮ মিনিটে। দ্বিতীয় ট্রেনটি ছাড়ে ৮টা ২২ মিনিটে। এছাড়া তৃতীয় ট্রেন ছাড়বে সকাল ৯টা ২৬ মিনিটে। প্রথম ট্রেনে ৭৫ জন ও পরবর্তীতে প্রতিটি ট্রেনে ৫০ জন করে যাত্রীরা যেতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এই রুটে মেট্রোরেল চলবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
জানা গেছে, শুরুতে সীমিত পরিসরে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। বৃহস্পতিবার থেকে মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাতায়াত করা যাবে। আপাতত মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও চলার সময় মাঝের কোনো স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে না।
সাধারণ যাত্রীদের অবগতির জন্য মেট্রো স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মেট্রোরেলে কোনো ধরনের পোষা প্রাণী বহন করা যাবে না। বিপজ্জনক বস্তু বহন করা যাবে না। মেট্রোর প্ল্যাটফর্মে পানের পিক বা থু থু ফেলা যাবে না। প্ল্যাটফর্ম ও মেট্রো ট্রেনে খাওয়া-দাওয়াও নিষেধ। প্ল্যাটফর্মের কোথাও কোনো ময়লা ফেলা যাবে না।
এছাড়া মেট্রোরেলে ওঠা-নামার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। কোচের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ানো যাবে না। মোবাইল ফোনের স্পিকার অন করে রাখা যাবে না। কথা বলতে হবে নিচু স্বরে।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ট্রেনে উঠার আগে স্টেশন থেকে একক যাত্রার কার্ড ও র্যাপিড পাস কার্ড নেওয়া যাবে। একক যাত্রার কার্ড মাত্র ৩০ সেকেন্ডে টিকিট কাউন্টার ও টিকিট বিক্রয় মেশিন থেকে নেওয়া যাবে। আর র্যাপিড পাস কার্ড নেওয়ার জন্য ফরম ওয়েবসাইট ও স্টেশনে পাওয়া যাবে।
এর আগে গতকাল বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে বহুল প্রতীক্ষিত ও দেশের প্রথম মেট্রোরেলের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে মেট্রোর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। টিকিট কেটে পরের ট্রেনে প্রথম যাত্রী হিসেবে মেট্রোরেলে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।
ওইদিন দুপুর ১টা ৫৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী মেট্রোরেল উত্তরা স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে। প্রায় ১৭ মিনিট পর ২টা ১১ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী আগারগাঁও স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে আসেন।
মেট্রোরেলকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার মুকুটে আরেকটি পালক হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের অহংকারের আরেকটি পালক সংযোজন করতে পারলাম। এটাই বড় কথা।