গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগপাড়ে রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। লাখ লাখ মুসল্লিদের এ মোনাজাতে অংশগ্রহণ করায় পুরো টঙ্গী এলাকা ভোর থেকেই জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ময়দানে স্থান না পাওয়ায় মুসল্লিরা পাশে কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পলিথিন, খবরের কাগজ বিছিয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। এর আগে রোববার ভোর থেকে টঙ্গী ও আশে-পাশের জেলা থেকেও মোনাজাতের আগ পযন্ত গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটেই ইজতেমাস্থলে আসেন তারা।

মোনাজাতের পরপরই নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার জন্য ফের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-পুবাইল, টঙ্গী-বনমালা আঞ্চলিক সড়ক, টঙ্গী-আব্দুল্লাহ্পুর সড়ক ও কামারপাড়া-আশুলিয়া সড়কে মুসল্লিদের ঢল নামে। গাড়িতে উঠতে না পেরে তারা আবার পায়ে হেঁটে বাড়ির দিকে রওনা হন।

বিশ্ব ইজতেমা মাঠ থেকে গাজীপুর শহর কিংবা রাজধানীতে সরাসরি ফেরার কোনো গণপরিবহন নেই। ফলে ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষে যারা ওই পথে প্রবেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন তাদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হেঁটে হেঁটে রওনা হয়েছেন, আবার কেউ কেউ কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে প্রাইভেটকার, সিএনজি, ভ্যান, মোটরসাইকেল, পিকাপ ভ্যান ও অটোরিকশা করে রওনা হয়েছেন।

ইজতেমামুখী মানুষের স্রোত, আখেরি মোনাজাতের অপেক্ষায় লাখো মুসল্লি

গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শেষে হওয়ার পর রাজধানীর বিমানবন্দর ও গাজীপুরের বিভিন্ন সড়ক এলাকায় এ চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীগামী মানুষের ঢল নাম থাকে বিমানবন্দর সড়কে। বিশেষ করে যারা টঙ্গী ইজতেমা মাঠে না যেতে পেরে যারা স্টেশন রোড, হোসেন মার্কেট উত্তরা কিংবা বিমানবন্দরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছিলেন তারা এখন ফিরছেন। গণপরিবহন না থাকায় ও অন্যান্য বাহনের সঙ্কট থাকায় তারা ফিরতি পথে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

ঢাকার কাকরাইল থেকে আসা আল আমিন জানান, ফিরতি পথে অধিকাংশ মানুষ পায়ে হেঁটে রাজধানীর দিকে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পিকাপভ্যান বা সিএনজিতে করে রওনা হয়েছেন।

গাজীপুরের পূবাইল এলাকার বাসিন্দা নওজেশ আলী জানান, আখেরি মোনাজাতের শুরুতে মানুষ দলে দলে ইজতেমা মাঠের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু মোনাজাত শেষ হওয়ার পর সবাই একসঙ্গে ফিরছেন বলে যানবাহনের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে একদিকে যেমন গাড়ির সঙ্কট, তেমনি ফিরতি পথে গুণতে হচ্ছে বেশি ভাড়া।

ঝুঁকি নিয়ে ফিরছেন মুসল্লিরা, প্রথম পর্বে মৃত্যু ১৩

আব্দুল্লাহপুর থেকে পিকাপ ভ্যানে করে আখেরি মোনাজাত শেষে বিমানবন্দর এসেছেন সানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আখেরি মোনাজাত শুরু আগে বিমানবন্দর থেকে ১৫০ টাকায় পিকাপ ভ্যান করে আব্দুল্লাহপুর গিয়েছিলাম। এখন ফিরতি পথে ২০০ টাকা দিয়ে আসতে হয়েছে। এক সঙ্গে অনেক মানুষ রওনা হওয়া অল্প সময়ের ব্যবধানে ৫০ টাকা ভাড়া বেড়ে গেছে।

মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং সেবা নিয়ে আখেরি মোনাজাত শেষে উত্তর বাড্ডা যাচ্ছেন সোলায়মান মিয়া। তিনি বলেন, যাওয়ার সময় উত্তরা যেতে খরচ হয়েছিল ২০০ টাকা। এখন ৪০০ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল করে যেতে হচ্ছে। যাত্রী বেশি দেখে চালকরা ভাড়াও বেশি চাইছেন। অন্যদিকে, তেজগাঁওয়ের উদ্দেশে হেঁটেই রওনা হয়েছেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ইজতেমা মাঠে যাওয়ার সময় বাস-অটোরিকশা দিয়ে গেলেও এখন কোনো গাড়িই পাচ্ছি না। এখন হেঁটে খিলক্ষেত যাব, সেখান থেকে কুড়িল গিয়ে বাসে রওনা হব। বাস বা কোন গাড়ি না পেলে পায়ে হেঁটেই বাসায় ফিরব।