যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্যাটারসন এলাকার জ্যাপার স্ট্রিটে ১৭৯ নম্বর প্লটে তার একটি তিন তলা বাড়ি রয়েছে। ২০১৮ সালে তিনি এটি তার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার মাধ্যমে কিনেছেন।

রবিবার (২৭ মার্চ) দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান এ সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনের কাছে জমা দিয়ে মামলার অনুমতি চেয়েছেন। কমিশন সভায় অনুমোদন পেলেই এস কে সিনহার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে

দুদক সূত্র জানায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান অবস্থায়

বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে কানাডা, আমেরিকা, দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ একাধিক দেশে তার সম্পদের তথ্যের জন্য চিঠি দেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। এই চিঠির জবাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এস কে সিনহার তিনতলা বাড়ি কেনার রেকর্ডপত্র পায় দুদক।

দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এস কে সিনহার ভাই অনন্ত কুমার সিনহা আমেরিকায় একজন ডেন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। তিনি ২০১৮ সালের ১২ জুন আমেরিকার একটি ব্যাংক থেকে ৩০ বছরের জন্য ১ লাখ ৮ হাজার ৭৫০ ডলার ঋণ নিয়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার দিয়ে একটি বাড়ি ক্রয় করেন। এছাড়া একই সময়ে তিনি ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার দিয়ে অপর একটি বাড়ি ক্রয় করেন। নিউজার্সির ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে অনন্ত কুমার সিনহার একটি হিসাবে (নং-৮৫৮০৩৩৭৫) ওই বছরেরই ১১ এপ্রিল থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৮ ডলার জমা হয়। এছাড়া একই বছরের ৫ মার্চ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৬০ হাজার ১০ ডলার জমা হয়। এসব অর্থ ইন্দোনেশিয়া এবং কানাডার ‘রয় এ গ্রুপ’ এর কাছ থেকে প্রাপ্ত বলে ব্যাংকের নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, অনন্ত কুমার সিনহা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯০ ডলারের একটি ক্যাশ চেক সংগ্রহের জন্য তার বড় ভাই এস কে সিনহাকে নিয়ে ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে যান। এসময় এস কে সিনহা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, আমেরিকার প্যাটারসন এলাকায় বাড়ি ক্রয়ের জন্য তিনি বন্ধুর কাছ থেকে ফান্ড পেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, এস কে সিনহা বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিভিন্নভাবে অবৈধ টাকা অর্জন করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন কায়দায় আমেরিকায় পাচার করে তার ছোট ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। সেই অর্থ দিয়েই নিউ জার্সির প্যাটারসন এলাকার ১৭৯ নম্বর জ্যাপার স্ট্রিটে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার দিয়ে বাড়িটি ক্রয় করেন।

দুদক সূত্র জানায়, অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে এস কে সিনহা বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেন এবং ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার পাচার করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদক সূত্রমতে, এস কে সিনহার আরেক ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা উত্তরার মতো জায়গায় বাড়ি করার মতো আর্থিক সঙ্গতি নাই। তার বক্তব্য ও অন্যদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, উত্তরার প্লটটি মূলত এস কে সিনহারই। তিনি ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে উত্তরার ৮ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর সড়কের ১/এ প্লটটি রাজউক থেকে অনুমোদন করান। তিনি নিজেই ওই প্লটের অর্থ পরিশোধ করেন। পরবর্তী পর্যায়ে ওই প্লটের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি শঙ্খজিৎ সিংহকে দেন। এস কে সিনহা নিজেই কৌশল খাটিয়ে তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে প্রথমে প্লটটি অনুমোদন করান এবং ব্যাংক ঋণ অনুমোদন করান। পরে আয়কর আইনজীবীর মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে তার ভাইয়ের নামে ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আয়কর নথিতে বাড়ি তৈরির টাকার উৎস দেখান এবং বাড়িটিকে বৈধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রেকর্ডপত্র যাচাই শেষে এবং এ সংক্রান্ত বক্তব্য বিশ্লেষণে পরিষ্কারভাবে দেখা যায় যে, ওই বাড়িটি এস কে সিনহারই। তিনি মিথ্যা তথ্য ও সম্পদ গোপন করে তা স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মোট ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬০ টাকার অবৈধ ও জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করার অপরাধ করেছেন। যা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

উল্লেখ্য, এর আগে দুদকের দায়ের করা আরেকটি মামলায় এস কে সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।