যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১-এর হামলার ২২তম বার্ষিকী আজ সোমবার। ২০০১ সালের এই দিনে চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে সমন্বিত আত্মঘাতী হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ এই হামলায় প্রাণ হারান ৩ হাজার মানুষ। প্রতি বছর বিভিন্ন আয়োজনে হামলার বার্ষিকী পালন করা হয়।

৯/১১ নামে পরিচিতি পাওয়া ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ শামিল হয় পশ্চিমা দুনিয়া। ওই হামলার জন্য আল কায়েদাকে দায়ী করে দলটির নেতা ওসামা বিন লাদেনের ঘাঁটি আফগানিস্তানে হামলা চালায় ওয়াশিংটন। ক্ষমতাচ্যুত করা হয় লাদেনের মিত্র তৎকালীন তালেবান সরকারকে। তবে গত ২২ বছরে পরিবর্তন এসেছে সেই দৃশ্যপটেও। ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার দুই দশকের মাথায়  আফগানিস্তান ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্র। ফের কাবুলের কুরসি ছিনিয়ে নেয় তালেবান।

মাত্র ৯০ মিনিটের ব্যবধানে সংঘটিত এই সন্ত্রাসী হামলা বলা চলে- পুরো বিশ্বকেই বদলে দিয়েছে। এই সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধে জড়িয়েছে। হামলা শুধু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বকে একাতাবদ্ধ করেনি বরং নিরাপত্তা, অভিবাসন নীতিও বদলে দিয়েছে। বর্ণ বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্য ও বিদ্বেষমূলক অপরাধ বাড়িয়েছে।

নিউইয়র্কের প্রাণকেন্দ্রে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার, পেন্টাগন এবং শেঙ্কসভিলে একযোগে স্মরণকালের ভয়াবহ এ হামলা ছিল ইতিহাসে নজিরবিহীন। ওই হামলায় পেন্টাগন এবং শেঙ্কসভিল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মুহূর্তেই ধসে পড়েছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার।

যা ঘটেছিল
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। স্থানীয় সময় সকাল ৮.৪৬ মিনিট। নিউইয়র্কের প্রতীক হয়ে ওঠা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারে আছড়ে পড়ে যাত্রীবাহী বিমান। অবিশ্বাসের রেশ না কাটতেই ঠিক ১৭ মিনিটের ব্যবধানে সাউথ টাওয়ারে হামলা। আকাশচুম্বী টুইন টাওয়ার ধুলোয় মিশে যাওয়া দেখে থমকে গিয়েছিল পুরো বিশ্ব।

এখানেই শেষ নয়, ৪৯ মিনিট পর ছিনতাই করা ৪ বিমানের তৃতীয়টি আঘাত হানে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর- পেন্টাগনে। কাছাকাছি সময়ে পেনসিলভেনিয়ার আকাশে বিধ্বস্ত হয় চতুর্থ বিমানটি। সবমিলিয়ে প্রাণহানি দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার।

ধ্বংসযজ্ঞের ২১ বছর পরও কাটেনি দুঃস্বপ্নের রেশ। হামলার সাক্ষী হয়েছিলেন যারা, ঘটনার বিভীষিকা আজও তাড়িয়ে বেড়ায় তাদের।

মার্কিন ইতিহাসের ভয়াবহতম ওই হামলার পর নড়েচড়ে বসে যুক্তরাষ্ট্র। দায়ী করা হয় ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদাকে। লাদেনকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে আফগানিস্তানে শুরু হয় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধে নিহত হয় লাখ লাখ নিরীহ মানুষ। হাজার হাজার কোটি ডলার অর্থ ব্যয় হয়।

পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মৃত্যু হয় লাদেনের। লাদেন হত্যাকেই সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের বড় সাফল্য হিসেবে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র।

আজ নাইন ইলেভেন হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই হামলায় নিহতদের স্মরণে নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এলাকা, পেন্টাগন এবং পেনসিলভেনিয়া পার্কে নানা আয়োজন করা হয়েছে।

এখনও রয়ে গেছে রহস্য
যুক্তরাষ্ট্র নাইন-ইলেভেনের পরিকল্পনাকারী হিসাবে আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করলেও মার্কিন প্রশাসন এ ব্যাপারে কিছু অনুমাননির্ভর ব্যাখ্যা ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। আগে সংঘটিত কয়েকটি দেশের মার্কিন দূতাবাসে সন্ত্রাসী হামলার কথা আল-কায়েদা স্বীকার করলেও নাইন-ইলেভেনের ঘটনার দায়িত্ব তারা কখনো স্বীকার করেনি। বরং ঘটনার পরপর ওসামা বিন লাদেন তাতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন।

অসংখ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গবেষকই শুধু নন, মার্কিন জনগণেরও এক বিরাট অংশ এ ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে মনে করেন। যারা নাইন-ইলেভেনের ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন, তাদের একটি বড় অংশের মতে, এটা যুক্তরাষ্ট্রের ‘অভ্যন্তরীণ’ অথবা ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কাজ। তাদের এই মন্তব্যের পেছনে অসংখ্য যুক্তিও তুলে ধরেছেন তারা।

নাইন ইলেভনের পর যা হয়েছে
১১ই সেপ্টেম্বরের ওই হামলার ঘটনার পর থেকে সারা বিশ্বে বিমান ভ্রমণের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দর ও বিমানের ভেতর নিরাপত্তা আরও কঠোর করতে ট্রান্সপোর্টেশান সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশান নামে পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসন গঠন করা হয়েছে।

নিউইয়র্কে হামলার স্থান, যেখানে টুইন টাওয়ার বিধ্বস্ত হয়েছিল, সেই “গ্রাউন্ড জিরো”র ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করতে সময় লেগেছিল আট মাসেরও বেশি। ওই স্থানে এখন তৈরি হয়েছে একটি যাদুঘর এবং একটি স্মৃতিসৌধ। ভবনগুলো আবার নির্মিত হয়েছে, তবে ভিন্ন নক্সায়।

সেখানে মধ্যমণি হিসাবে নির্মিত হয়েছে ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা ফ্রিডম টাওয়ার- যা উচ্চতায় আগের নর্থ টাওয়ারের চেয়েও বেশি। নর্থ টাওয়ারের উচ্চতা ছিল ১,৩৬৮ ফুট আর নতুন ফ্রিডম টাওয়ার ১,৭৭৬ ফুট উঁচু।

পেন্টাগন পুনর্নিমাণে সময় লেগেছিল এক বছরের কিছু কম। ২০০২ সালের অগাস্টের মধ্যে পেন্টাগনের কর্মচারীরা আবার তাদের কর্মস্থলে ফিরে যান।