কেউ যেন বিএনপির নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে না পারে- সে বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের সচেতেন থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালে কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপি’র ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন। সম্মেলনে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
তারেক রহমান বলেছেন, আমরা সকলে প্রত্যাশা করছি, বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করছে। বিগত ১৬ বছর ধরে মানুষের যে অধিকার আদায়ের জন্য বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রাম করে এসেছে, বাংলাদেশের মানুষ, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে, বিগত ১৬ বছর ধরে যে স্বৈরাচার এ দেশের মানুষে টুঁটি চেপে ধরেছিলো, সেই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে ঐক্যবদ্ধভাবে। মানুষ নিজের রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাবার জন্য। স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার কিছু সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছে। অন্তর্র্বতীকালীন যে সংস্কারগুলো প্রস্তাব দিয়েছে, এই প্রস্তাবগুলো প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ প্রস্তাবনা বিএনপি আরো আড়াই বছর আগে দেশের সামনে দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন বিষয়ে মতামত উপস্থাপন করেছে, বিএনপি তার মতামত দিয়েছে, কোনো কোনো বিষয় হয়তো অন্যান্য কারো সাথে আমাদের মতপার্থক্য আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার এবং বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের প্রশ্নে বিএনপি’র কারো সাথে কোনো আপত্তি নেই, দ্বিমত নেই।
তিনি বলেন, আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের প্রত্যেকটি মানুষকে, শহীদ জিয়া এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রত্যেকটি সৈনিককে অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে। কেউ যেন আমাদের নাম ব্যবহার করে, এই দলের নাম ব্যবহার করে, বিএনপির নাম ব্যবহার করে তাদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে না পারে। কেউ যেন আমাদের নাম ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে আমাদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে- এই ব্যাপারে প্রত্যেককে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে ধানের শীষের যত নেতাকর্মী আছে, যারা আজও গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, আমাদের সামনে একটি লক্ষ্য থাকতে হবে। আমাদের যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে, সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, কর্মসংস্থানের অধিকার, নারী অধিকার, শিক্ষা-চিকিৎসার অধিকার এবং কৃষক ও শ্রমিকের নিশ্চিত করতে হলে জনগণের রায়ের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের দুটি বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করতে বলেন তারেক রহমান। একটি হলো দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আরেকটি হলো দলের নামে কেউ যেন ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে না পারে, দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে না পারে।
তখন তার দুটি প্রতিজ্ঞার প্রতি উপস্থিত নেতাকর্মীরা দুই হাত তুলে সমর্থন জানান।
সকালে জাতীয় সংগীত ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৯ বছর পর এ সম্মেলন শুরু হয়। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা স্টেডিয়ামে সমবেত হন। কয়েক হাজার কর্মীর উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয় সম্মেলন। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিকেল চারটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে ভোট দেবেন দুই হাজার ৯০ জন কাউন্সিলর। এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে।
সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন-নবী খান সোহেল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরিফুল আলম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম।