রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। আজ (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ৮টায় মহানগর এলাকায় মোট ২২৯টি ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে একটানা বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।

ঠাণ্ডার সকালে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা বাড়তে থাকে। ভোটারদের লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ভোটের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। পাশাপাশি মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যাজ পড়া কর্মী-সমর্থকদের কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হতে দেখা গেছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো উপস্থিতিও দেখা গেছে।

এবারই প্রথম রসিক নির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন ভোটাররা। সঙ্গে প্রতিটি কেন্দ্র ও কক্ষে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

এদিকে ভোটগ্রহণে ইভিএমে ত্র“টির কারণে ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা গেছে অনেক ভোটারকে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বুথে প্রবেশ করেও ভোট দিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন তারা। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে এমন অভিযোগ করেছেন প্রার্থী ও ভোটাররা। শুধু তাই নয়, জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাও ভোট দিতে গিয়ে ইভিএমে ত্র“টর কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সকাল ৯টায় নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের আলমনগর কলেজ রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দন তিনি। এসময় জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট ভোট দিয়েছেন। এসময় তিনি বেলন, সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে। রংপুরের মানুষ নৌকার সঙ্গে আছে। উন্নয়নের স্বার্থে বিপুল ভোটে নৌকাকে বিজয়ী করবেন। ডালিয়া বলেন, ভোটের পরিবেশ চমৎকার রয়েছে। উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নগরবাসী ভোট দিতে কেন্দ্রে আসছেন। জয়ের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী।

এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, ভোট ঘিরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রতি সাধারণ কেন্দ্রে ১৫ জনের এবং ৮৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জনের ফোর্স মোতায়েন রাখা হয়েছে।

এছাড়া নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ করা হয়েছে ৩৩ জন নির্বাহী হাকিম। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ১৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।

এদিকে র‌্যাব-বিজিবির একাধিক টিম মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় নিয়োজিত রয়েছে। তারা ভোটের আগে ও পরে মোট ৫ দিনের জন্য নিয়োজিত থাকবেন।

রসিক নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এক হাজার ৮০৭ সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে রংপুর এবং ঢাকায় নির্বাচন অফিস থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোথাও কোনো অনিয়ম দেখতে পেলেই গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনের মতো ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন এই রিটার্নিং অফিসার।

এবার রসিকের ৩৩টি ওয়ার্ডের ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন নারী ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। আর তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার রয়েছেন একজন।

এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থী রয়েছেন ২৬০ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৯ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৮৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। নগরীর ৩০ নম্বর ওড়ার্ডের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

মেয়র পদে ৯ প্রার্থী হলেন- জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলন।

২০১৭ সালের ২১শে ডিসেম্বর এই সিটিতে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচিত কর্পোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৯শে ফেব্র“য়ারি। সে অনুযায়ী এ সিটির বর্তমান নির্বাচিতদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ১৮ই ফেব্র“য়ারি।