সাভারের রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর পূর্ণ হলো আজ (সোমবার)। এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ১৩৬ জন পোশাকশ্রমিক। আহত হয়েছিলেন আরও ২ হাজার মানুষ। দেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাসে বড় ট্র্যাজেডি রানা প্লাজা ধস। ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল ভবনটি ধসে পড়ে। ওই ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে শ্রমিকদের মৃত্যুতে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার ১০ বছর পার হয়ে গেলেও বিচারকাজ চলছে ধীরগতিতে।
এদিকে, দিনটিকে স্মরণ করতে স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনগুলো নিয়েছে নানা কর্মসূচী। রবিবার সন্ধ্যায় সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নিহতদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে মোমবাতি প্রজ্বলন করেন পরিবারের সদস্য, আহত শ্রমিক এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে চার দফা দাবিতে মানববন্ধনও করে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছিল রানা প্লাজা। ভবনের প্রথম তলায় ছিল বিভিন্ন দোকান। দ্বিতীয় তলায় দোকান ও ব্যাংকের শাখা। তৃতীয় থেকে সপ্তম তলাতে ছিল পোশাক কারখানা। এরমধ্যে তৃতীয় তলায় নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেডে এবং ফ্যানটম ট্যাক লিমিটেড, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় ইথারটেক্স লিমিটেড গার্মেন্টস। অষ্টম ও নবম তলা ছিল ফাঁকা।
সেদিন সকালে ভবনে কাজ করছিল প্রায় ৩,০০০ শ্রমিক। আটটার দিকেই কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছিল। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিকট শব্দে প্রথম তলার ওপরে পুরো ভবন ধসে পড়ে।
এর পরপরই শুরু হয় উদ্ধার কাজ। শুরুতে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ে উদ্ধার কাজে যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।
ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে একে একে উদ্ধার হতে থাকে জীবিত, আহত, মৃত মানুষের দেহ। আহতদের নেওয়া হয় আশপাশের হাসপাতালে। আর মৃতদের দেহ নেওয়া হয় সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে।
টানা ১৭ দিন ধরে চলা উদ্ধার অভিযানে উদ্ধার হওয়া প্রতিটি মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হতো ওই মাঠে। লাশের অপেক্ষায় থাকা স্বজনরা ছুটে আসতেন সাইরেন শুনলেই। এই বুঝি স্বজনের মরদেহ এলো! স্বজনদের আহাজারিতে দিনরাত ভারি হয়ে থাকতো অধরচন্দ্র স্কুল মাঠ।
প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের পুরোটা জুড়েই তখন কান্না আর সাইরেনের আওয়াজ। অধরচন্দ্রের ওই মাঠ এখনও বয়ে বেড়ায় সেই স্মৃতি।
ওই সময় স্কুলটিতে পড়তেন আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, “আগে ক্লাসের বাইরেও প্রচুর ঘুরাফেরা, খেলাধুলা করতাম এই মাঠে। কিন্তু রানা প্লাজার ধসে পড়ার পর মৃত লাশগুলো সারি সারি করে রাখা হয়েছিল এখানে। এখনও গা ছমছম করে ওঠে।”
প্রায় ১৭ দিনের উদ্ধার অভিযানে রানা প্লাজার ভবন থেকে ১,১৩৬ জন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল ২,৪৩৮ জন শ্রমিককে।
আহতদের অনেকেই এখনও দুর্বিষহ সেইদিনের স্মৃতি বয়ে বেরাচ্ছেন। অনেকেই অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু। এখনও সেদিনের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় তাদের।