বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রদূতদের অযাচিত মন্তব্য মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, শুধু জাপান নয়, নির্বাচনে কোনো দেশের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। নির্বাচন নিয়ে যাঁরা মন্তব্য করছেন, তাঁদের সতর্ক করা হবে। আজ বুধবার (১৬ই নভেম্বর) মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুস্পমাল্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই দেশ কখনো কারও কাছে মাথা নত করবে না। দেশের মর্যাদা যেকোনোভাবে ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, সংবিধানের ১২৬ ধারায় উলেখ আছে, নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সেখানে তাদের সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। এটা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী তাদের এমন নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। বিএনপি যতই আন্দোলন-সংগ্রাম করুক, তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে।
দেশে দুর্ভিক্ষ আসার কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দেশে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে। দেশ কৃষিক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। আমাদের কৃষকেরা এখন খাদ্য উৎপাদনে অনেক অনেক সক্রিয়। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর অঞ্চলের কৃষকেরা ভুট্টা ও সবজি চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। সরকার রাসায়নিক সারে ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষকদের জন্য সরকার সব ধরনের সুযোগ তৈরি করতে কাজ করছে।’
এর আগে গত সোমবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। জাপান বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় জানিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচন সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি শুনেছি পুলিশ কর্মকর্তারা নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভোট দিয়ে ভর্তি করে ফেলেছেন। এ ধরনের ঘটনা এর আগে অন্য কোনো দেশে আমি শুনিনি। এ ধরনের ঘটনা আর কখনোই দেখতে চায় না জাপান। সরকার আমাদের জানিয়েছে যে আগামী নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ হতে যাচ্ছে। ফলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এতে অংশগ্রহণ করবে এটিই আমার আশা।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ইতো নাওকি বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের পরই ঢাকার জাপান দূতাবাস উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি প্রকাশ করে। এ বিষয়টি বেশ অস্বাভাবিক, কারণ দূতাবাস এ ধরনের কাজ করে না। জাপান আশা করে আগামী নির্বাচন ভালো হবে, অবাধ ও স্বচ্ছ হবে।’
নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ব্যক্তিগত নাকি জাপান সরকারের- জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে জাপান সরকারের প্রতিনিধি। আমার বক্তব্য হচ্ছে জাপান সরকারের বক্তব্য।’
বাংলাদেশে ভোটার শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থায়নের ব্যাপারে তিনি সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের কথা উলেখ করেন এবং এ ব্যাপারে তিনি জাপান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন।
আগামী ২৯শে নভেম্বর তিন দিনের সফরে জাপানে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই পটভূমিতে অবাধ, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে জাপানে প্রধানমন্ত্রীর সফরে কোনো আলোচনা হবে কিনা- প্রশ্ন করা হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এটি প্রধানমন্ত্রীর বিষয়, তিনি আলোচনায় কোন বিষয়টি রাখবেন, আর কোনটি রাখবেন না।’