দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ, গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্র কাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৫৫টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে না থাকা এবং সরকার ও দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি না হওয়াসহ রাজনীতিতে আমূল সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে টিআইবি। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাবও দিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার (২৮ আগস্ট) রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে টিআইবি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশ তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্তভাবে সংসদ পরিচালনার জন্য স্পিকারকে সংসদের অভিভাবক হিসেবে দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব পরিহার করে সংসদের সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সংসদে বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করতে হবে। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অবর্তমানে সভাপতিমণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত বিরোধীদলীয় সদস্যদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে হবে।

তিনি বলেন, নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসহ (সরকারি হিসাব, আইন, বিচার ও সংসদ, অর্থ, বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়) অন্তত ৫০ শতাংশ কমিটিতে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে সভাপতি নির্বাচন করতে হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সব কার্যক্রমে স্বার্থের দ্বন্দ্ব পরিহার করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সংসদীয় ব্যবস্থায় সংসদ সদস্য প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জনবৈচিত্র্য- যেমন : তরুণ প্রজন্ম, নারী, আদিবাসী ও অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ তরুণ প্রতিনিধি থাকতে হবে।

এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীন সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করার দাবি জানায় টিআইবি।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি ও অর্থপাচারের কার্যকর জবাবদিহির অনুকরণীয় উদাহরণ স্থাপনে দুদক, বিএফআইইউ, এনবিআর, সিআইডি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সমন্বয়ে স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠন করা জরুরি। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধিত্ব ও সরকারি কার্যক্রমে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে স্বার্থের দ্বন্দ্ব আইন প্রণয়ন করার সুপারিশ করছি।

দুদকের সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুদকের স্বাধীনতা ও সক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য দুদকের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতাসহ জনবল নিয়োগ, পদায়ন ও বদলির ক্ষমতা দুদক সচিবের কাছ থেকে সরিয়ে কমিশনের হাতে ন্যস্ত করতে হবে।

এদিকে জাতীয় বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করারও দাবি জানায় টিআইবি।