বৈশাখের তপ্ত সূর্য যেন সব তাপ ঢেলে দিচ্ছে ভূমিতে। তাতে অসহনীয় তাপে পুড়ছে সারাদেশ। আবহাওয়া অধিদপ্তর এই তাপমাত্রায় দেশজুড়ে ‘হিট ওয়ার্নিং’ বা উচ্চ সতর্ককতা জারি করেছে। এমন অবস্থায় খোলা জায়গায় থাকা মানুষের ‘হিট স্ট্রোক’সহ নানা রকম শারীরিক ঝুঁকি দেখা দিতে পারে বলে জানান আবহাওয়া ও জনস্বাস্থ্যবিদরা। বৈশাখের এই রুদ্ররূপ সহসাই যাবে না, তাই তাপমাত্রাও কমবে না। এরওপর ঝড়েরও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গ্রীষ্মকালে গরম পড়বে বিষয়টা এই অঞ্চলের মানুষের কাছে খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।  রাজশাহী বিভাগ ও খুলনা বিভাগের একাংশে গ্রীষ্মকালে গরমটা বেশি পড়ে। কিন্তু গত ১০ বছরে দেশের ৮০ শতাংশ এলাকাজুড়ে বিভিন্ন সময়ে তাপপ্রবাহ বয়ে আসছে। আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে অতি উষ্ণ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা। যা ‘ওয়েট বাল্ব গ্লোব টেম্পারেচার’ নামে পরিচিত।

সাধারণত এপ্রিলের এ সময়ে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে তা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। গতকাল শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে গেছে। গড়ে সারা দেশের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল।

আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি মাসের বাকি সময়জুড়ে তো বটেই, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ ধরে সারাদশে থেমে থেমে তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। আর অতি উষ্ণ ও আর্দ্রতা থাকতে পারে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত। আবহাওয়াদিদের মতে গত ৬০ বছরে এপ্রিলের উষ্ণতা দ্রুত বেড়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকায় তাপপ্রবাহ বইছে। অন্য বছরগুলোতে এই সময়ে কয়েক দিন পরপর একাধিক কালবৈশাখী, ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়। এতে তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসে। এবার দেশের কিছু জায়গা ছাড়া বৃষ্টির দেখা মিলছে না।

পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ঘোষণা করা হয়। আর তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর আর্দ্রতা ৩০ এর ওপরে গেলে একে বিপজ্জনক আবহাওয়া হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ওই উচ্চ গরমের সঙ্গে মানুষের শরীর খাপ খাওয়াতে পারছে না। এতে নানা ধরনের রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।