কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের অপরাধমূলক কার্যক্রম শক্ত হাতে দমনের বার্তা দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। শনিবার (২১ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ‌‘বাংলাদেশ ও ইন্দো-প্যাসিফিক সহযোগিতা : অগ্রাধিকারমূলক সমস্যা এবং উদ্বেগ’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তার সমস্যা মোকাবিলা করা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। আমরা দেখছি, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা আইন শৃঙ্খলা-বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সমালোচনা করছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, গত বৃহস্পতিবার আরসার সঙ্গে রোহিঙ্গা সলভেশন অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সংঘর্ষ হয়েছে। বাংলাদেশ মিয়ানমারের শূন্য লাইনের ক্যাম্পগুলো পুড়ে গেছে। আরসা ও আরএসওর পারস্পরিক সংঘাতের ফলে দিন দিন নিরাপত্তার বিষয়টি আরও জটিলতার দিকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রোহিঙ্গাদের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের অপরাধমূলক কার্যক্রম শক্ত হাতে দমন করা হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা খর্ব করা যাবে না। আমরা আশা করব, আইন প্রয়োগকারীরা ক্যাম্পে ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে কাজ করছে, সেটা আপনারা তুলে ধরবেন।

রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ বছরে বিলিয়ন ডলার খরচ করছে বলে জানান শাহরিয়ার আলম। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ খরচ করছে। ২০২১ সালে আমরা রোহিঙ্গাদের পিছনে ১.২ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। দাতা সংস্থাগুলো এর অর্ধেক সংগ্রহ করতে পারছে না। আমরা পকেট থেকে বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ খরচ করেছি।

dhakapost

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকটের মধ্যে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো রোহিঙ্গাদের অর্থায়নের বিষয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা মিলছে না। আমরা বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে বলতে চাই, এটা শুধু মানবিক সাপোর্টে নয়, অগ্রাধিকারও কিন্তু।

শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা খুব শিগগিরই ২০২৩ সালের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) ঘোষণা করতে যাচ্ছি।

রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের জন্য দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় প্রচেষ্টার সমন্বয় করে যাচ্ছে সরকার। সরকারের অব্যাহত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে। রোহিঙ্গা সংকটের উৎস মিয়ানমার। সমাধানও সেখানে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করে যাচ্ছি। মিয়ানমারের সঙ্গে যেকোনো আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য বাংলাদেশের দ্বার উন্মুক্ত। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাই।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স আয়োজিত সংলাপটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর শাহাব এনাম খান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব (এমএইউ) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হুসাইন এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।