হার দিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশের এশিয়া কাপ মিশন। ক্যান্ডিতে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম খেলায় জয়ের জন্য স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে ১৬৫ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ দল। যা অনায়াসে পেরিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। জয় পেয়েছে ৫ উইকেটের। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার হেড টু হেড পারফরম্যান্স লঙ্কানদের আগে থেকেই এগিয়ে রেখেছিল যোজন দূরত্বে। কিন্তু লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের আশা জাগাচ্ছিল সাম্প্রতিকসময়কার পাফরম্যান্স। পাশাপাশি ছিল ২০১৩ সালে ওয়ানডে ফরম্যাটে প্রথমবারের মতো লঙ্কা বধের স্বাদ। কিন্তু সেই আশা শেষ পর্যন্ত ধূলিসাৎ হয়ে গেল বাজে ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়ের কারণে।
বাংলাদেশের দেয়া ১৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি শ্রীলঙ্কান দুই ওপেনার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই শিরীফুল ইসলামের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে মুশফিকের হাতে গ্লাভসবন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরেন দিমুথ করুণারত্নে। এরপরের ওভারেই আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কার উইকেটটিও তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। টাইগার স্পিডস্টারের বলে বোল্ড আউট হয়ে নিশাঙ্কা সাজঘরে ফিরলে লঙ্কানদের সংগ্রহ দাঁড়ায় দুই উইকেট হারিয়ে ১৫ রান।
লঙ্কানদের হাল ধরতে তখন ক্রিজে ছিলেন কুশল মেন্ডিস এবং সাদিরা সামারাবিক্রমা। এই সাদিরার কাছেই শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে হয়েছে টাইগার বোলারদের। ২১ বলে ৫ রান করে মেন্ডিস সাকিবের শিকার হয়ে ফিরে গেলেও সাদিরা একপ্রান্ত আগলে রানের চাকা ঘুরিয়েছেন। চারিথ আসালাঙ্কার সঙ্গে গড়েছেন ৭৮ রানের এক জুটি যাতে ভর করে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় লঙ্কানরা।
দলীয় ১২১ রানে শেখ মেহেদীর বলে সাদিরা স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন। আউট হওয়ার আগে তিনি করেছেন ৭৭ বলে ৫৪ রান। এরপরের ওভারেই ধনঞ্জায়া ডি সিলভাকেও ফেরান সাকিব। ফলে ম্যাচে ফেরার কিছুটা আশা জাগে টাইগারদের।
তবে শেষ পর্যন্ত টাইগারদের আর ম্যাচে ফেরা সম্ভব হয়নি। আসালাঙ্কার হার না মানা ৯২ বলে ৬২ রানের ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ৩৯ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় লঙ্কানরা। ফলে পাঁচ উইকেটের জয় দিয়েই এবারের এশিয়া কাপে নিজেদের যাত্রা শুরু করল শ্রীলঙ্কা।
এর আগে পাল্লেকেল্লেতে আজ টাইগারদের অধিনায়ক টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে ব্যাট হাতে ম্যাচ ওপেন করতে নামেন নাইম শেখ এবং তানজিদ তামিম।
এ ম্যাচে অভিষেক হয় তানজিদ হাসান তামিমের। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী এই ক্রিকেটার কয়েকদিন আগে শ্রীলঙ্কায় হওয়া ইমার্জিং এশিয়া কাপে ভালো পারফর্ম করেছিলেন, তাকে নিয়ে আশাও তাই ছিল বেশি। কিন্তু তানজিদ নিজের আন্তর্জাতিক অভিষেকে ফেরেন ডাক মেরে।
মাহেশ থাকসেনার প্রথম বলে অস্বস্তি পড়েন। দ্বিতীয়টি ব্যাট-প্যাডের ফাঁকা জায়গা দিয়ে পায়ে লাগে বল। আম্পায়ার আউট দেন তাকে। আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার নাঈম শেখ এ ম্যাচেই পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কে নেন ব্যক্তিগত সংগ্রহ, কিন্তু বড় করতে পারেননি সেটি। ২৩ বলে ১৬ রান করে ডি সিলভার বলে আউট হন তিনি। এগিয়ে এসে খেলতে গেলে ডি সিলভার স্লো হওয়া বল ব্যাটে ঠিকঠাক মতো লাগেনি, ক্যাচ যায় পয়েন্টে দাঁড়ানো নিশাঙ্কার হাতে।
তিনে খেলতে নেমে দলকে পথ দেখাতে পারেননি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। ১১ বলে ৫ রান করে পাথিরানার বাউন্সার কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। সাকিবের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন তাওহীদ হৃদয় ও শান্ত। এ দুজনের ব্যাটে বাংলাদেশও নতুন করে আশা খুঁজে পেয়েছিল।
যদিও জুটিতে শুরুতে যেভাবে রান আসছিল, পরে আসেনি সেটি। প্রথম ১৪ বলে ১০ রান করা হৃদয় যখন আউট হন তখন তার নামের পাশে ৪১ বলে ২০ রান। চাপে পড়ে যাওয়া এই ব্যাটার দাসুন শানাকার বলে এগিয়ে আসলে বল প্যাডে লাগে, শুরুতে আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় শ্রীলঙ্কা। ৮০ বলে শান্তর সঙ্গে তার ৫৯ রানের জুটি ভেঙে যায়।
পরের ব্যাটারদের তেমন সাহায্য না পেলেও দলকে একাই টেনে নেন শান্ত। এদিকে বাড়ছিল রান তোলার চাপও। মাঝখানে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ২২ বলে ১৩ রান করে আউট হন। এই ব্যাটার একবার উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেও আম্পায়ার আউট দেননি, ততক্ষণে রিভিউ শেষ হয়ে গেছে লঙ্কানদের। তার আউটও ছিল হতাশার। পাথিরানার ওয়াইড হবে এমন বলে আপারকাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যানে দাঁড়ানো দিমুথ করুণারত্নের হাতে ক্যাচ দেন।
এ ম্যাচে বাংলাদেশ নেমেছিল আট ব্যাটার নিয়ে। সাতে খেলতে নামা মিরাজ ১১ বলে ৫ রান করে রান আউট হন। মিরাজ স্কয়ার লেগে বল পাঠালে রান নেওয়ার জন্য দৌড় শুরু করেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা শান্ত। কিন্তু মিরাজ অল্প একটু বেরিয়ে আর নড়েননি। তার আগেই ক্রিজে পৌঁছানোয় আউট হননি শান্ত, মিরাজকে ফিরতে হয় সাজঘরে।
আটে নামা মাহেদীও ১৬ বলে ৬ রান করে এলবিডব্লিউ হন ওয়ালালগের বলে। নবম ব্যাটার হিসেবে শান্ত আউট হন ৭ চারে ১২২ বলে ৮৯ রান করে। মাহেশ থিকসেনার বলে বোল্ড হন এই ব্যাটার। এরপর বাংলাদেশের অলআউট হতেও খুব বেশি সময় লাগেনি।