করোনা অতিমারীর কারণে প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবারও লাখো মুসল্লির সমাগমে মুখরিত সৌদি আরবের মক্কা নগরী। স্থানীয় সময় শুক্রবার (০৮ই জুলাই) দুপুরে পবিত্র মক্কা নগরীতে শুরু হয়েছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। মিনা থেকে আল্লাহর মেহমানরা আরাফাতের ময়দানের জড়ো হয়েছেন। হাজিদের লাব্বাইক লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে আরাফাতের ময়মদান। দুপুরে সেখানে পবিত্র মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা পাঠ করেছেন শায়খ ডক্টর মুহাম্মাদ আবদুল করীম আল-ঈসা। পবিত্র হজের খুতবায় বিশ্ব উম্মাহর মঙ্গল কামনা, ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও পারস্পারিক সৌহার্দের মাধ্যমে বিশ্বে মানবতা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়। সবাই যেন আরও বেশি কল্যাণমূলক কাজ করে যেতে পারেন, সেজন্য দোয়া করা হয় খুতবায়।

খুতবা দেন সৌদি রাজনীতিক এবং দেশটির সাবেক বিচারমন্ত্রী শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা। আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হয় খুতবা। সেখানে তিনি বলেন, ‘অবশ্য আমাদেরকে পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতি বজায় রেখে চলতে হবে। এবং আমাদের ঐক্য থাকতে হবে। যেহেতু আল্লাহ বলেছেন—তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সম্মিলিতভাবে আকড়ে ধরো। এর মাধ্যমেই মুসলিম উম্মাহর যে অস্তিত্ব রয়েছে, সেই অস্তিত্ব বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী হবে।’এবার হজে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মুসল্লি। এর মধ্যে বাংলাদেশি আছেন ৬০ হাজার।

এবছর সৌদি টেলিভিশন হজের আরবি খুতবা বাংলাসহ ১৪টি ভাষায় অনুবাদ করে সম্প্রচার করেছে। খুতবার পর এক আজানে জোহর ও আছর নামাজ আদায় করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। সুর্যাস্তের পর মুজদালিফায় গিয়ে আবারো এক আজানে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন এবং পাথর সংগ্রহ করবেন। পরদিন ১০ই জিলহজ মিনায় ফিরে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি ও শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ এবং মাথার চুল ছেঁটে ফেলবেন। এরপর মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ বিদায়ী তাওয়াফ ও সাঈ করবেন হাজিরা।

দুই বছর বিরতির পর সারাবিশ্ব থেকে ১০ লাখ হজযাত্রী অবস্থান নিয়েছে ঐতিহাসিক আরাফায়। প্রতি হিজরি বছরের ৯ জিলহজ মুসলিম উম্মাহকে হজ পালনে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে হয়। নবিজী সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল-হাজ্জু আরাফাহ অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াই হজ। এদিন মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি মানুষকে ক্ষমা করেন। ক্ষমার আশায় সারাবিশ্ব থেকে আগত হজযাত্রীরা আরাফায় তাকবির, তালবিয়া, ক্ষমা প্রার্থনা ও কান্না-রোনাজারিতে ব্যস্ত। বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন স্থল বা মিলনমেলা এণ আরাফাহ ময়দান। আরাফায় অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে হজের ভাষণ দেন শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা।

১৪৪৩ হিজরির হজের জন্য সৌদি সরকার ১০ লাখ বিদেশীর হজের অনুমোদন দিয়েছেন। যথাযথ ব্যবস্থাপনায় পবিত্র নগরী মক্কা থেকে বিশেষ যানবাহনে হজযাত্রীরা আরাফার ময়দানে উপস্থিত হচ্ছেন। ১০ লাখ হাজির কণ্ঠে লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত এবারের আরাফার ময়দান।

প্রাণঘাতী বৈশ্বিক অতিমারি করোনার কারণে ১৪৪১ ও ১৪৪২ হিজরির হজে নির্ধারিত অল্পসংখ্যক স্থানীয় ও প্রবাসীরা হজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবছর আরাফাতের ময়দানে হজ পালনকারীদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সেবার সর্বোচ্চ ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেছে হজ ও ওমরাহ কর্তৃপক্ষ। আরাফাতের ময়দানে প্রচণ্ড গরম মোকাবেলায় নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও প্রস্তুত রাখা হয়েছে অভিজ্ঞ স্বেচ্ছাসেবক ও স্বাস্থ্য সেবকদল।