প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগনের লাশের উপর দিয়ে যারা ক্ষমতায় যেতে চায় তারা অমানবিক। ধ্বংসাত্মক কাজ পরিহার করে তাদের গণতান্ত্রিক পথে ফিরে আসার আহবান জানান তিনি। সশস্ত্র দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (নভেম্বর ২১) বিকেলে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যে কোন দুর্যোগে সশস্ত্র বাহিনী জনগনের পাশে থেকে আস্থা অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণকে হত্যা করে সেই লাশের ওপর পা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা যারা করে তাদের মতো অমানবিক আমি আর কোথাও দেখি না। ভাবতে অবাক লাগে।

তিনি বলেন, জানি না, সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মেরে… কেন মারে সেটিই আমার কাছে প্রশ্ন? আর এই যে সাধারণ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারা, বাসে আগুন দেওয়া, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা, এটি কী কারণে, তা আমার কাছে এখনো বোধগম্য না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটির পর একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি। যেমন, কোভিড-১৯ আমরা মোকাবিলা করলাম। এ ছাড়া অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের ঝামেলা মাঝে মাঝে শুরু হয়।

কিছু লোক লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতা দখলের কথা ভাবছে : প্রধানমন্ত্রী

শান্তি চান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শান্তি চাই। শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, আঞ্চলিকভাবে এবং সারা বিশ্বে শান্তি চাই। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত সুস্পষ্ট- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ শান্তির দেশ, মানুষ যখন একটু শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল, মানুষ একটু আশার আলো দেখছিল, সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সে সময় অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল ও অবরোধ মানুষের জীবনকে আবার ব্যাহত করছে, শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে, এটিই হলো সবচেয়ে কষ্টের বিষয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এটিই চাই, যারা এগুলো করছে অন্তত তাদের একটু আক্কেল-ঠিকানা আসুক। এভাবে ধ্বংসাত্মক কাজ না করে গণতান্ত্রিক ধারায় যোগ দিক, জনগণের ওপর আস্থা রাখুক, বিশ্বাস রাখুক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সে লক্ষ্যে আর্ম ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই সাথে আরও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পর দেশে গণতান্ত্রিক ধারাই ছিল না। তবে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আমরা দেশের মানুষের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে চাই। দেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি বা এগিয়ে চলা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

জ্বালাও-পোড়াও দেশের মানুষ চায় না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারা কেমন আন্দোলন, আমার বোধগম্য নয়। জনগণের লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় বসার এ কেমন মানসিকতা? মানুষ যখন স্বস্তিতে ছিল, তখন সহিংসতা, হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি মানুষের জীবনকে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে। আমার আশা, যারা এসব করছে, তারা গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরবে।

PM

সেনা সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। কিন্তু সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আঘাত এলে যাতে প্রতিহত করা যায়, সেই প্রস্তুতি রাখতে হবে।

দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়ন শুধু রাজধানী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না, প্রত্যেক গ্রামে উন্নয়ন করেছে সরকার। সমাজের কোনো শ্রেণির মানুষ নিচে পড়ে থাকবে না।

এর আগে সকালে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম. নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাকে স্বাগত জানান।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে যান। সেখানে তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।