চট্টগ্রামে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাড়িতে হামলা হয়েছে। তবে  এ সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, নগরের মেহেদীবাগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের বাড়িতে হামলা হয়েছে। শনিবার (তোসোরা আগস্ট) সন্ধ্যায় বিভিন্ন সময়ে এসব হামলার ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) তারেক আজিজ বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের মিছিল থেকে প্রথমে এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। তারপর শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।’

নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান বলেন, ‘সন্ধ্যায় কিছু দুর্বৃত্ত হঠাৎ করে মন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করে। এ সময় তিনি বাসায় ছিলেন না।’ শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস রাহুল দাশ বলেন, ‘তারা বাড়ির সামনে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করে। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে ফেলে। বাড়ির প্রধান ফটকও ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাড়িতে থাকা লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।’

যেভাবে হামলা শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে দেওয়ানহাট হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল ষোলশহর এলাকায় পৌঁছে। ভিডিও এবং সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এ সময় মিছিল থেকে একটি দল চশমা হিলের দিকে ঢুকে পড়ে। মিছিল করে তারা শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে যায়। সেখানে তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে। বাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে। বাড়ির প্রধান গেট ভেঙে ফেলে। নেতাকর্মীর বসার জন্য রাখা অর্ধশত চেয়ার ভাঙচুর করে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট তারা সেখানে অবস্থান করে।

হামলাকারী ৪০ থেকে ৫০ জন

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল রড, লাঠি ও হকিস্টিক নিয়ে প্রথমে শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির গেটে আক্রমণ করে। লাথি দিয়ে গেট খুলে ফেলে। একটি অংশ তখন চশমা হিলের রাস্তা পাহারা দেয়, আরেকটি ভাঙচুর করে। তিনটি গাড়ি ভাঙচুরের পর তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বাড়ির দরজা-জানালাও ভাঙচুর করে।

এমপি বাচ্চুর কার্যালয়ে আগুন

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলের একটি অংশ থেকে নগরের টাইগারপাসে পুলিশ বক্স ভাঙচুর এবং ওয়াসা এলাকায় চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে আওয়ামী লীগের এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তারা জিইসি মোড়ে এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। বিকেল ৩টা থেকে নিউমার্কেট মোড়ে দুই ঘণ্টা অবস্থানের পর মিছিল নিয়ে টাইগারপাসের দিকে অগ্রসর হন আন্দোলনকারীরা। টাইগারপাস মোড়ে পৌঁছে তারা একটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। এরপর তারা এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর অফিসে আগুন দেয়। দুর্বৃত্তরা তার কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে ও পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে।

সিটি মেয়রের বাসায় হামলা, পুলিশের গুলি

শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় হামলার পর চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিমের বাসভবনেও হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় মেয়র বাসায় ছিলেন। বাসার সামনে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীরা দুর্বৃত্তদের ছত্রভঙ করতে গুলি চালায়। এ সময় বারইপাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন আবদুস সাত্তার নামে এক যুবক। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে কার গুলিতে তিনি আহত হয়েছেন তাৎক্ষণিক তা জানা যায়নি। এ ঘটনার পর নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে পুলিশ, আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ত্রিমুখী সংর্ঘষ হয়।

মেয়রের এপিএস দুলাল চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলার পর মেয়রের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রধান ফটক ভেঙে দুর্বৃত্তরা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। কিন্তু বাড়ির সামনে থাকা পুলিশ গুলি ছুড়লে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মেয়র মহোদয় অক্ষত আছেন।’