বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে যথেচ্ছভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে কাজ করছে না। বিশেষ করে বাংলাদেশে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কম বয়সী শিশুদের চিকিৎসায় প্রায়ই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না, ফলে অনেক শিশুর মৃত্যু হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) রাতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।
আইসিডিডিআরবি জানায়, আইসিডিডিআর,বি এবং ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটাল (এমজিএইচ)- এর এক গবেষণাতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে প্রায়ই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে রোগজীবাণু প্রতিরোধী হয়ে উঠছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই সেটা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আর এই গবেষণার ফলাফল ওপেন ফোরাম ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তারা আশঙ্কা জানিয়ে বলছে, অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে রোগজীবাণুর প্রতিরোধী হয়ে ওঠা একটি সম্ভাব্য মারাত্মক মহামারির সৃষ্টি করতে পারে, যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যেতে পারে।
আইসিডিডিআর,বি-র নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস ডিভিশনের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. মোহাম্মদ জোব্বায়ের চিশতি এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন।
যখন আইসিডিডিআরবিতে অনেক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কম বয়সী শিশু ভর্তি হচ্ছে কিন্তু যাদের অ্যান্টিবায়োটিক কাজে দিচ্ছে না, তখনি ড. চিশতি এই গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন বলে জানানো হয় আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞপ্তিতে। সেখানে ড. চিশতি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত অ্যান্টিবায়োটিক এবং শ্বাসতন্ত্রের উন্নততর চিকিৎসা পাওয়ার পরে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কয়েক ডজন শিশু নিউমোনিয়ায় মৃত্যুবরণ করে।’
নিউমোনিয়া ফুসফুসের একটি সংক্রমণ। যার ফলে বায়ু থলিগুলোতে তরল পদার্থ ও পুঁজ জমা হয় এবং এতে কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়। কার্যকর চিকিৎসা ছাড়া এই সংক্রমণ মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ নিউমোনিয়া। কমবয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ভাইরাসের কারণে নিউমোনিয়া হতে পারে, তবে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়ার কারণেও নিউমোনিয়া হতে দেখা যায়। আরও উদ্বেগের বিষয় যেসব শিশুর ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ ছিল না তাদের তুলনায় অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর সম্ভাবনা ১৭ গুণ বেশি ছিল।
আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ও এই গবেষণার জ্যৈষ্ঠ গবেষক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে যেসব কারণে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ঘটনা ঘটছে সেগুলোর সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কিনতে পারে এবং অনেক মানুষ আমাশয়, সর্দি, কাশি ও জ্বরের মতো সাধারণ অসুস্থতায় নিজেরাই অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে নিজেদের চিকিৎসা করে থাকে।
ড. আহমেদ আরও বলেন, ‘আমরা হয়তো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের যথাযথ তত্ত্বাবধান, বিশেষ করে হাসপাতালে ভর্তি নেই এমন মানুষদের ক্ষেত্রে এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রান্ত সমস্যা কমিয়ে আনতে পারি।