ঝিনাইদহ সদরে শিশু মনিরা অপহরণের পর হত্যা মামলায় ৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে অপর ধারায় আরও ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক আসামির ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ (রোববার) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক  মো. নাজিমুদ্দৌলা এ রায় দেন।

দণ্ডিতরা হলেন- ঝিনাইদহ সদর উপজেলার অচিন্তপুর গ্রামের মো. আছালত মণ্ডলের ছেলে মো. জাফর, মৃত খয়বার বিশ্বাসের ছেলে শিপন, মো. কুদ্দুস মুন্সীর ছেলে মো. মিন্টু এবং মো. মজিবার মোল্লার স্ত্রী মোছা. নুপুর।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৭ই জুলাই সদর উপজেলার অচিন্ত্যনগর গ্রামের রমজান আলীর ৫ বছরের মেয়ে মনিরা খাতুনকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা শিশুটির বাবার কাছে মুক্তিপণ দাবী করলে ১১ই জুলাই সদর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়- শিশু মনিরাকে অপহরণের পর নিয়ে যাওয়া হয় জেলার কালীগঞ্জের একটি গ্রামে। সেখানে কান্নাকাটি শুরু করলে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয় তাকে (মনিরা)। একপর্যায়ে মৃত্যু হয় ফুটফুটে শিশু মনিরার। এরপর মরদেহ নিয়ে চলে টানাটানি।

কালীগঞ্জের দণ্ডিত নুপুরের ধর্ম বোনের বাড়ি থেকে মনিরার মরদেহ রাতের আঁধারে অচিন্তপুর গ্রামে নিয়ে আসা হয়। সেখানে দণ্ডিত নুপুরের বাড়িতে ঘরের ভিতরে একটি ড্রামে লুকিয়ে রাখা হয় লাশ। সুযোগ মতো গ্রামের (মনিরার বাবার) একটি পাটখেতে মনিরার লাশ ফেলে দেওয়া হয়। শিশু মনিরার পচাগলা লাশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের লোকজন উদ্ধার করে সেই গলিত লাশ। মনিরার বাবা মো. রমজান আলী বাদী হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে মামলা দায়ের করেন।

সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যে দুইজন হুজাইফা ওরফে জিহাদ এবং জাফর আদালতে ১৬৪ ধারা (ফৌজদারি কার্যবিধি) মতে শিশু মনিরাকে অপহরণ এবং হত্যার লোমহর্ষক ঘটনা তুলে ধরে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পুলিশ ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ ৯ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করে।

এ মামলায় খালাস দেওয়া হয়েছে নাসিম, মনিরুল ইসলাম, মনিজান, আশরাফুল এবং মোশারফ হোসেন নামের পাঁচজনকে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন পিপি ইসমাইল হোসেন বাদশা এবং আসামিপক্ষে ছিলেন মো. রবিউল ইসলাম, ফারহানা তানি রেশমাসহ অনেকে।