সনাতন ধর্মের মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি, শুভ জন্মাষ্টমী আজ। হিন্দু সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে জন্মাষ্টমী পালন করবে। দ্বাপর যুগের শেষ দিকে মহাপুণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দি দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।

হিন্দু পুরান মতে, ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টম তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। সনাতন শাস্ত্র অনুসারে-দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতেই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং শান্তিহীন পৃথিবীতে শান্তি আনতেই শান্তিদাতা শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব।

তার শিক্ষা হলো-অন্যায়কে পরাভূত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তার জন্মের সময় এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পাপ ও অরাজকতায় পরিপূর্ণ ছিল। নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ মানব জাতির কাছে জীবন ধারণের অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন। ইতিহাসে তিনি যাদবকৃষ্ণ ও দর্শনশাস্ত্রে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণ। শ্রীমদ্ভগবত গীতায় তিনি অবতারকৃষ্ণ, দার্শনিক কৃষ্ণ, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ। ঈশ্বরতত্ত্বের মহান প্রতীক শ্রীকৃষ্ণ বেদে ঋষিকৃষ্ণ, দেবতাকৃষ্ণ। মহাভারতে তিনি রাজর্ষি কৃষ্ণ, শাসক ও প্রজাপালক কৃষ্ণ, অত্যাচারী দমনে যোদ্ধাকৃষ্ণ। তার বাণী সমগ্র বিশ্বকে হাজার হাজার বছর ধরে আলোড়িত করছে।

শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সরকার আজ সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সম্প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান।

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয়ভাবে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়। শুক্রবার (১৯ই আগস্ট) সকালে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ, বিকেলে ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা ও রাতে তিথি অনুযায়ী কৃষ্ণ পূজা। তৃতীয় দিনে শনিবার (২০শে আগস্ট) বিকেলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) জন্মাষ্টমী উপলক্ষে স্বামীবাগ আশ্রমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।

এছাড়া রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন, স্বামী ভোলানন্দ গিরি আশ্রম, প্রভু জগদবন্ধু মহাপ্রকাশ মঠ, রাধামাধব জিও দেব বিগ্রহ মন্দির, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, রাধা গোবিন্দ জিও ঠাকুর মন্দির, শিব মন্দির, রামসীতা মন্দির ও মাধব গৌড়ীয় মঠসহ বিভিন্ন মন্দির, পূজামন্ডপ ও ধর্মীয় সংগঠন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে।