ভয়াবহ ধস নেমেছে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারবাজারে। আজ (শুক্রবার) একদিনেই আদানি গ্র“পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ১৯ শতাংশের বেশি কমে গেছে। খবর সিএনবিসির।

চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই শেয়ার মার্কেটে খরা শুরু হয় বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় তিন নম্বরে থাকা আদানির প্রতিষ্ঠানগুলোতে। দু’দিনে তাদের মোট শেয়ারের দাম কমেছে অন্তত ৫০ বিলিয়ন ডলার। শেয়ারবাজারের এই বিপুল পতনের জেরে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবেরের তালিকার তিন নম্বর থেকে সাতে নেমে গেছেন ভারতের এ শিল্পপতি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি আদানি ও তার কোম্পানির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ বেশ পুরোনো। কয়েক বছর ধরেই আদানি গ্র“পের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ সরব প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।

আদানির দুর্নীতি ও জালিয়াতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই অনুসন্ধান করছিল বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ। দুই বছরের অনুসন্ধানের পর গত মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।

চাঞ্চল্যকর ওই প্রতিবেদনের জেরেই ভারতীয় ধনকুবের আদানির করপোরেট সাম্রাজ্যে পতনের সুর। বুধ ও বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সকালেই এই পতনের গতি আরও বেড়ে যায়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, সবশেষ দুই সেশনে ৫০ বিলিয়ন তথা পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বাজারমূল্য হারিয়েছে আদানি গ্র“প।

হিনডেনবার্গ রিসার্চের ওই প্রতিবেদনের জেরেই এশিয়ার শীর্ষ ধনীর ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে বলে উলে­খ করেছে ব্লুমবার্গ। তার মূল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে এরই মধ্যে তারা ২৫০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।

হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৌতম আদানির কোম্পানিগুলো কারচুপি করে তাদের শেয়ারদর বাড়িয়েছে। মূলত কোম্পানিতে প্রোমোটর বা মালিকের কারসাজিতে স্টকের দাম বাজারে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে বলে রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনমতে, অন্য লোকের ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচুর শেয়ার কিনে নিজের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে আদানিরা, যা বিনিয়োগকারীদের চোখে ধুলো দেয়ার সমান। হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে প্রকাশ্যেই আদানি গ্র“পকে স্টকে তছরুপ ও হিসাবে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে। মূলত আদানির পাঁচ কোম্পানির নাম রয়েছে এই জালিয়াতির তালিকায়।

যদিও হিনডেনবার্গের রিসার্চের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি আদানী গ্র“পের। আইনি পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি তাদের। তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই শেয়ারবাজারে ভয়াবহ পতনের মুখে পড়ে আদানি গ্র“প।

হিনডেনবার্গের রিপোর্ট আরও বলছে, আদানি গ্র“পের পাঁচ বড় কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে ‘ডি-লিস্টিং’ তথা বাদ পড়তে পারে। এই পাঁচ কোম্পানির শেয়ারে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পতন হতে পারে।

বর্তমানে লিকুইডিটি ক্রাইসিস বা নগদের অভাবে ধুঁকছে এই কোম্পানিগুলো। যার ফলে বিপুল ঋণের বোঝা মেটাতে অপারগ আদানি গ্র“প। সেই কারণেই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে কোম্পানি।

অতীতে এক মার্কিন কোম্পানিকে নিয়ে একই ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। দেখা যায়, ওই কোম্পানির ৯২ ডলারের শেয়ার ২ ডলারে নেমে আসে। পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে ডি-লিস্টিং হয়ে যায় সেই কোম্পানি।

সাম্প্রতিক পতনের আগে গত কয়েক বছর গৌতম আদানির জন্য ছিল শুধুই উত্থানের গল্প। ২০২২ সালে এশিয়ার সর্বোচ্চ মুনাফা লগ্নিকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।