মিঠা পানির ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত চলনবিলে শুঁটকির উৎপাদন কমছে। বর্ষা সংক্ষিপ্ত হওয়া ও নির্বিচারে সোঁতিবাঁধ দিয়ে ডিমওয়ালা মাছ নিধন করায় এই পরিস্থিতি। শুঁটকি মাছের চাতাল কমে গেছে। এক সময় চলনবিলের মাছ স্থানীয়দের জীবনযাত্রায় বিপুল প্রভাব ফেলত। তখন মাছ বিক্রি করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতো বিলাঞ্চলের মানুষ। ব্রিটিশ সরকার চলনবিলের এই মাছ কলকাতায় নেওয়ার জন্য ১৯১৪ সালে চলনবিলের মাঝ দিয়ে ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ করে। তখন চলনবিলের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

দেশি মাছকে কেন্দ্র করে চলনবিল এলাকায় ২৫০টি অস্থায়ী শুঁটকির চাতাল পড়তো। এখন কমে তা ১২০টিতে দাঁড়িয়েছে। গুরুদাসপুরের সাতগাড়ী গ্রামের ব্যবসায়ী নান্নু মিয়ার শুঁটকির চাতাল মহিষলুটি মাছের আড়তের পাশে। তিনি জানান, এবার বিলে দুই মাস বর্ষা হয়েছে। সৈয়দপুর, নীলফামারীসহ বিভিন্ন এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ীরা এসে আমার চাতাল থেকেই শুঁটকি কিনে নিয়ে যায়। এবার চাতালে শুঁটকির উত্পাদন গত বছরের অর্ধেক হবে।

চাতাল মালিকদের কাছে জানা গেছে, চলতি শুঁটকি মৌসুমে প্রায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যের ১০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উত্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তারা জানান, এ গ্রেডের (ভালো মানের) শুঁটকি মাছ আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাই, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ ২৫টি দেশে রপ্তানি করা হয়। সাধারণত এসব দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে রয়েছে চলনবিলের সুস্বাদু শুঁটকির ব্যাপক সমাদর। সৈয়দপুরের শুঁটকি ব্যবসায়ী এখলাছ উদ্দিন মিয়া জানান, চলনবিলের শুঁটকির মান ভালো, স্বাদ বেশি। তাই ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাটমোহরের শুঁটকি ব্যবসায়ী আ. মতিন জানালেন, চলনবিল অঞ্চলে শুকানো শুঁটকি মাছ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই, ফলে অনেক সময় শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়, ক্ষতির সম্মুখীন হন ব্যবসায়ীরা।

আশ্বিন মাসের শুরুতেই শুঁটকির চাতাল পড়তে শুরু করে। অগ্রহায়ণ মাসে পানি না শুকানো পর্যন্ত চাতালগুলো চালু থাকে। ইতিমধ্যেই বিলপাড়ের চাতালে মাছ শুঁটকি শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই চাতালে নারী শ্রমিকরা শুঁটকি শুকানো ও আনুষঙ্গিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। চাতালের নারী শ্রমিক সাবিনা জানালেন, সারা দিন শুঁটকি চাতালে কাজ করে ৪০০ টাকা পাওয়া যায়। চাটমোহরের চাতালগুলোতে অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক রয়েছেন। জানা যায়, চলনবিলের দুই সহস্রাধিক পরিবার মৌসুমি এই শুঁটকি তৈরির কাজে জড়িত। তবে এবার মাছের সংকট রয়েছে। ফলে শুঁটকির উৎপাদনও কম হবে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, চলনবিলের মাছের সুনাম রয়েছে। চলনবিলে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এ অঞ্চলের অধিকাংশ মাছ বাইরে চলে যায়। বিলপাড়ের মৎস্যজীবীরা বিলের ছোটো-বড় মাছ ধরে শুঁটকি চাতালে বিক্রি করেন। বিলপাড়ের বিভিন্ন স্থানে দেখছি শুঁটকির চাতাল পড়েছে। তবে এবার বর্ষার সময়টা কম ছিল। ফলে মাছের স্বল্পতা রয়েছে। তিনি মনে করেন এ অঞ্চলে শুঁটকি সংরক্ষণাগার ও বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।