বর্তমান সংবিধানের ভিত্তিতে বিরোদীদলের যেকোনো শর্তে নির্বাচনে করতে সরকার রাজি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। শনিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনা ও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্পণ্য করা হবে না। যেকোনো শর্ত সংবিধানের ভিত্তিতে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে বিরোধীদলগুলোর যেকোনো শর্ত মানতে আমরা রাজি। কিন্তু তাদেরও একটি জিনিস মানতে হবে। সেটা হলো, সংবিধান মেনে চলতে হবে।’
আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আজ কথায় কথায় যারা সংবিধান কাটাছেঁড়ার কথা তোলেন, রাজনীতির ময়দানে বক্তব্য-বিবৃতিতে যারা সংবিধানে হাত দেওয়ার কথা বলেন, তাদের আর বরদাশত করা হবে না। এটা আমরা লালন করতে দিতে পারি না।’
সংবিধান যেটুকু নাড়াচাড়া হয়েছে, তা বিএনপি-জামায়াত করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘অনেক রক্ত, জীবন, কষ্ট, ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্যদিয়ে এ সংবিধান সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান বিশ্বের অত্যন্ত সমাদৃত একটি সংবিধান। বিশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান হিসেবে বিবেচিত হয় এটি। এ সংবিধান আর কাটাছেঁড়া করতে দেওয়া হবে না।’
বিদেশিরা প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের কথায় ‘কনভিন্সড’ দাবি করে আমু বলেন, ‘কয়েক মাস হলো- বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকে আসছেন। বিদেশিরা এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করছেন। প্রধানমন্ত্রীও তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন- সংবিধানের ভিত্তিতে গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সেখানে বিদেশিদের যা যা করণীয় আছে, তা করুক। যত পর্যবেক্ষক খুশি পাঠাও।’
বিএনপির দাবির ঠিক নেই মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা বলেন, ‘একবার কয় জাতীয় সরকার, আরেকবার কয় নির্বাচনকালীন সরকার। কখন কী বলে, কথার কোনো ঠিক নেই। কিন্তু আমাদের কথা স্পষ্ট, ১৪ দলের সিদ্ধান্তও পরিষ্কার। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে; প্রধানমন্ত্রীর যে বক্তব্য- সংবিধান রেখে, সংবিধানের ভিত্তিতে এ দেশে নির্বাচন হবে। সেই কথায় একমত। সেই আন্দোলনের সঙ্গেও আমরা একমত।’
সাবেক মন্ত্রী ও ১৪ দলীয় জোটের এ সমন্বয়ক বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা সবকিছু মেনে নেবো। এমনকি নির্বাচনকালীন সরকারে যদি কেউ আসতে চান, টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে তাদের নেওয়া হবে। কীভাবে নেওয়া হবে? সেটা হলো- সংসদে যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাদের যেকজন সংসদ সদস্য আছেন, শতকরা হিসাব কষে তাদের নির্বাচনকালীন সরকারের নেওয়া হবে।’
মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণা করেন আমির হোসেন আমু বলেন, ‘মাঠে নানান কথা ছড়ানো হচ্ছে। এগুলো প্রোপাগান্ডা, এসব নতুন নয়। আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধ করি, তখন প্রথমেই একটা প্রশ্ন উঠলো, ছড়িয়ে পড়লো। সেটা হলো- তোমরা বঙ্গবন্ধুকে চাও, নাকি স্বাধীনতা চাও? বঙ্গবন্ধু তখন এমনি জনপ্রিয় ও আকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি, তারা মনে করেছিল- সবাই বলবে স্বাধীনতার দরকার নেই, বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমরা পাল্টা প্রচারণা চালালাম- বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা এক-অভিন্ন। আমরা দুইটায় চাই। এখনো ঠিক তেমন পরিস্থিতি বিরাজমান। আমরা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখিয়ে দিতে চাই। তবে, সেটা শেখ হাসিনার অধীনেই।’
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। সভায় ১৪ দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।