সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণ করা যাবে। সংবিধানের এ-সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদ পুরোটাই পুনর্বহাল করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা বহাল রেখে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন নিষ্পত্তি করে এই আদেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ রোববার এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এই রায়ের ফলে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসমর্থতা ও পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা এর আগে তিনবার পরিবর্তন হয়। ৭২ এর সংবিধাণে অপসারণের ক্ষমতা সংসদে দেয়া হলে, সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ক্ষমতা দেয়া হয় রাষ্ট্রপতিকে। এরপর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। ২০১৪ পর্যন্ত সেভাবেই চলছিল।
দশম সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে বিচারপতিদের অভিসংশনের ক্ষমতা আবারও ফিরিয়ে নেয়া হয় সংসদের হাতে। এজন্য ১৬তম সংশোধনী আনে আওয়ামী লীগ সরকার। সেসময় বিরোধী দলগুলো ঘোর আপত্তি জানালেও কর্ণপাত করেনি তারা। এমনকি আপিল বিভাগে সংশোধনী বাতিলের জেরে একজন প্রধান বিচারপতিকে পড়তে হয় বেকায়দায়। একপর্যায়ে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি।
৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দলবাজ, দুর্নীতিবাজ ও বিতর্কিত বিচারপতিদের অপসারণের দাবি উঠে। তাৎক্ষণিক ছুটিতে পাঠানো হয় ১২ বিচারপতিকে। কিন্তু, কোন প্রক্রিয়ায় বিচারপতিদের অপসারণ করা হবে, এ নিয়ে ঠেকে যায় ধোঁয়াশা।
রোববার ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ নিষ্পত্তি হলে খুলে যায় বিচারপতি অপসারণের সকল দরজা। অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে সরানো যাবে বিচারপতিদের। সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে ১৫ বিচারপতির বিরুদ্ধেও।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাজনীতি ও দুর্বৃত্তায়ন থেকে বেরিয়ে আসলো বিচার বিভাগ।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে আইনজীবীরাও। বলেছেন, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২ থেকে ৮ পর্যন্ত বিধান ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যম বাতিল করা হয়েছিল। এগুলো পুনর্বহাল করেছেন আপিল বিভাগ।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে। অভিযোগ তদন্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে অপসারণের সুপারিশ করবে।