প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উন্নত দেশেও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। তাই সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারেও সাশ্রয়ী হতে হবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে যৌথসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বৈশ্বিক সংকটের মুখেও দেশের অর্থনীতি গতিশীল আছে বলে এসময় মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় শোকের মাস আগস্টের কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়।
শোকের মাস আগস্ট এর কর্মসূচি নির্ধারণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সাথে যৌথসভা অনুুষ্ঠিত হয়। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সভায় চূড়ান্ত হয় শোকের মাসের কর্মসূচি। এতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগস্টের ভয়াবহ স্মৃতি স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, পঁচাত্তরের পর যারা একুশ বছর ক্ষমতায় ছিলো সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ থেকে শুরু করে নানা অপকর্ম তারাই করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য দুই তৃতীয়াংশ ক্ষমতা নিয়েই সংবিধান সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়— যাদের এ ধরনের মানসিকতা, তারাই ভোট চুরি করে। জিয়াউর রহমান, এরশাদ তাই করে গেছেন। আর খালেদা জিয়া তো গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এলেন। আরেকবার জামায়াতের হাত ধরে এলেন।
সমালোনাচকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় থাকলে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়, মানুষ ভালো থাকে।
এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্রের চোরাকারবারি, অর্থপাচারকারীরা বিএনপির নেতা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে একটা মানুষও পায়নি তারা নেতা বানাতে? দলটির গঠনতন্ত্রের ৭ অনুচ্ছেদে আছে, সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলে দলটির নেতা হতে পারবে না। কিন্তু বিএনপি তাই করেছে। তারপরও তারা কথা বলছে।
তিনি বলেন, সারাদিন কথা বলার পর বলে আমাদের (বিএনপি) কথা বলতে দেয় না। মিটিং করে লোক হয় না, বলে আমাদের লোক আসতে দেয় না। অভিযোগ তো তারা (বিএনপি) করে। কিন্তু তাদের কাছে লোক আসবে কেন? কোন আশায় আসবে। সেটা হলো বাস্তব কথা, সেটা তো চিন্তা করতে হবে।
আদমশুমারিতে দেশের জনসংখ্যা খুব একটা বাড়েনি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬ কোটি ৫০ লাখ প্লাস। সামান্য কিছু হয়তো পরবর্তী সময়ে বাড়বে বন্যাকবলিত এলাকা ধরে। কেউ আমাদের ১৮ কোটি বলে, ১৭ কোটি বলে, আমাদের কিন্তু এত জনসংখ্যা নয়। কাজেই এই মানুষগুলোকে খাবারের ব্যবস্থা করতে পারব। সবই পারব। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ যতক্ষণ ক্ষমতায় আছে সবই পারব। কিন্তু লুটেরারা আসলে কী করবে, সেটা জানি না।
বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশবাসীকে কৃচ্ছ্রতা সাধনের অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের সঞ্চয়, উৎপাদন বাড়াতে হবে।
মানুষের সব মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, খুব বড় আকারে হয়তো করতে পারব না। কিন্তু গরিবানা হালে মানুষের দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা, একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই, সুন্দর থাকার ও লেখাপড়ার ব্যবস্থা এটুকু তো করতে পারব।
গত শুক্রবার জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগর দিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন খাদ্য সরবরাহ করতে চুক্তি করেছে। এ উদ্যোগ নেওয়ায় জাতিসংঘের মহাসচিব ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, খাদ্যদ্রব্য এখন আনা যাবে, কেনা যাবে। আমি মনে করি এটা আমাদের জন্য স্বস্তির বিষয়। এর মাধ্যমে খাদ্যের অভাব থাকবে না।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে আওয়ামী লীগ সবসময় সবার আগে এগিয়ে আসে বলে দাবি করেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় মানবতার সেবায় এগিয়ে আসে। আমরা ক্ষমতায় থাকলে জনগণের সেবা করি। আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকা মানে হলো দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অর্থপাচার, মানবপাচার। কারণ তারা মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসে।
আবারও বন্যা হওয়ার আভাস রয়েছে জানিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কার্যালয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, কামরুল ইসলাম, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, আবদুস সোবহান গোলাপ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, দেলোয়ার হোসেন, বিপ্লব বড়ুয়া, সেলিম মাহমুদ, আমিনুল ইসলাম, সায়েম খান প্রমুখ।