র্থনীতিতে সমুদ্র সম্পদের অপার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে এই সম্পদ আহরণে গবেষণা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এজন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। বুধবার (৩ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ওশান প্রসপারিটি: ক্যাটালাইজিং ব্লু ইকোনমি ইন বাংলাদেশ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
সমুদ্র সম্পদের সমৃদ্ধি প্রসঙ্গে বুধবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি যৌথভাবে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে দেশি বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সামুদ্রিক সম্পদকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সমুদ্রের খনিজ ও প্রাণিজ সম্পদের পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বয়ে টেকসই এ খাতের সম্ভাবনা কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে হবে।
বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদের সঠিক ধারণা ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই আন্তর্জাতিক সন্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
স্পিকার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্র দূষণসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। টেকসই সমুদ্র সম্পদের সঠিক ব্যবহারে প্রয়োজনে আধুনিক প্রযুক্তি, ধারণা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়েও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
বাংলাদেশের সমুদ্রের ইকো সিস্টেমের উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তা কামনা করেন স্পিকার।
এ সময় তিনি বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের কাজ শেষ হলে এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য বাণিজ্যের হাবে পরিণত হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে নীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগানো যেতে পারে।
সমুদ্রের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে অতিমাত্রায় মৎস্য আহরণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জলববায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সচিব) ড. কাওসার আহমেদের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম।
তিনি বলেন, বেসরকারি খাত ও গবেষকদের সমন্বয়ে সরকারের দেশের সমুদ্র সম্পদকে টেকসইভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ব্লু ইকোনমি কাজে লাগানোর বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটি অর্থনীতির লাইফলাইনে পরিণত হতে পারে।
সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে আরও গবেষণার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। সমুদ্রকে কাজে লাগিয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার কাজ চলছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার, মন্ত্রী পরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়ংএডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টও এডিমন গিন্টিং বক্তব্য রাখেন।
আমাদানি রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে সমুদ্র পরিবহন ব্যাপক ভূমিকা রাখছে বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার।
তিনি বলেন, সমুদ্র অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই সমুদ্র নিশ্চিত করা হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসাইন বলেন, ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার পাশাপাশি সমুদ্রকে কাজে লাগাতে বন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে চলেছে সরকার।
মৎস্য আহরণ, খনিজ সম্পদের সম্ভাবনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং পর্যটনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চল অনেক সম্ভাবনাময় দাবি করে তিনি বলেন, এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ টেকসই অর্থনতির জন্য সুনীল অর্থনীতির বিকল্প নেই মন্তব্য করে এ খাতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ।
দিনব্যাপী সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানসহ নীতি নির্ধারক ও দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন।