বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করা এবং এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে উভয়পক্ষ। বিশেষ করে, বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে অঙ্গীকার করেছে ঢাকা-নয়াদিল্লি।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যখনই বাংলাদেশে আসি, আমার ভালো লাগে। তাই আবারও এসেছি। আজকের সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমাদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

ড. মোমেন বলেন, সম্পর্কের সব ইস্যুতে আলোচনা করেছি। আমাদের সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে। গত বছর আমরা সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করেছি। এ ৫০ বছরে ভারত-বাংলাদেশ একসঙ্গে যেভাবে কাজ করেছে, তা ইতিহাসে স্মরণীয়। আমাদের মধ্যে যে বড় বড় সমস্যাগুলো ছিল, সেগুলো সমাধান করেছি। ছোট ছোট যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানের জন্য আমরা অঙ্গীকার করছি।

জয়শঙ্কর বলেন, গত করোনা মহামারির মধ্যে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি এবং আমাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ছিল। এ সময়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অনেক উন্নতি হয়েছে। গত বছর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন, যা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা সুযোগ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার ব্যক্তিগত বার্তা ও শুভেচ্ছা পৌঁছে দিয়েছি। তাকে আরও বলেছি, তার আসন্ন ভারত সফরের জন্য আমরা মুখিয়ে আছি। আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাইরে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও আলাপ করেছি এবং একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তার কাছ থেকে অঙ্গীকার পেয়েছি।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সপ্তমবারের মতো জেসিসি বৈঠকের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এ বৈঠকের পর আমাদের সম্পর্কের মাত্রা নতুন স্তরে উন্নীত হবে। আমরা আবার কোভিডের পূর্ব অবস্থার কানেক্টিভিটিতে ফিরে যাব। ঈদের পর দুদেশের মধ্যে বাস-রেল যোগাযোগ চালু করব। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, প্রকল্প ঋণ, ভ্রমণ পরিষেবা ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ বিষয়গুলো কোভিডের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরে তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।

জয়শঙ্কর বলেন, গত দুই বছরে আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে প্রকল্পগুলো উন্নয়ন করেছি, তা চালু করতে চাই। ভারত উপ-আঞ্চলিক একাধিক খাতে সংযোগ ও সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করতে চায়। বিশেষ করে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে আমরা আঞ্চলিকভাবে উপকৃত হতে পারি। সেজন্য একসঙ্গে কাজ করতে চাই।

তিনি বলেন, ভারত এ অঞ্চলে জ্বালানি খাতের বড় উৎপাদনকারী ও ভোক্তা। এ খাতে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। ভারত এ বিষয়ে উপ-আঞ্চলিক ফোরাম, বিবিআইএন ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় কাজ করতে চায়।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফরে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা তো আপনাদের দিক থেকে ঠিক করা হবে।

এদিকে, এদিকে, মোমেন-জয়শঙ্করের বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ড. মোমেন আশা প্রকাশ করেন, তিস্তার পানিবন্টন ইস্যু খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাক্ষরের পাশাপাশি দুদেশের অমীমাংসিত ইস্যুগুলোও সমাধান হবে।

একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে দুপুরে ঢাকায় আসেন জয়শঙ্কর। কর্মসূচির শুরু‌তে জয়শঙ্কর বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০১৯ সালে প্রথমবার ঢাকা সফর করেন জয়শঙ্কর। এরপর গত বছরের মার্চে ২য় বার ঢাকা সফরে এসেছিলেন তিনি। এটি তার তৃতীয় ঢাকা সফর।

শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে ভুটানের থিম্পুর উদ্দেশে রওনা করবেন তিনি।