জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ (রোববার) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ৬৯ এর গণ-আন্দোলনের শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সব স্বপ্নগুলোকে ভেঙে দিয়েছে। আমাদের সব অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে। আজকে মানুষ সেই অধিকারগুলো পুনরুদ্ধার করার জন্য সংগ্রাম শুরু করেছে। আমরা দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আরও ঐক্যবদ্ধ হবো।
তিনি বলেন, সরকারের সময় শেষ হয়ে এসেছে। জনগণ জেগে উঠেছে। সব রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায় করা হবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, গণতন্ত্র এখন তাদের হয়ে গেছে। কোন গণতন্ত্র? সেই মুজিববাদের গণতন্ত্র, বাকশালের গণতন্ত্র, একদলীয় শাসন ব্যবস্থার গণতন্ত্র। না, এ দেশের মানুষ তা হতে দেবে না।
তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে জনগণের গণতন্ত্র, একটা মুক্ত বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। অনেকেই আশা করছেন আরও তীব্রগতিতে আন্দোলন চলবে। অবশ্যই হবে। আন্দোলনের একটা নির্দিষ্ট ধারা, বিজ্ঞান ও একটা নির্দিষ্ট কেমিস্ট্রি আছে।
‘আমি বিশ্বাস করি, ইতোমধ্যে কয়েক মাসের আন্দোলনে জনগণ জেগে ওঠেছেন। অধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমরা দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আরও ঐক্যবদ্ধ হব। আমাদের ঐকবদ্ধ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে জনগণই আন্দোলনের পথ দেখাবে, কোন পথে গেলে এই দানবকে পরাজিত করতে পারব- আমরা শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তন চাই।’
তিনি বলেন, সব স্বপ্নকে ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এ সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে। তারা কিছুতেই যাবে না। অবৈধ ক্ষমতা দখলে রাখতে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে সরকার। রাজনৈতিক মুক্তি করার জন্য আমাদের আরও বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এদেরকে পরাজিত করতে হবে।
শহিদ আসাদ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্যাহর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন স্বপন, শহিদ আসাদের ছোট ভাই ড. নুরুজ্জামান হক প্রমুখ।
শহিদ আসাদের স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন যে সংগ্রাম চলছে সেই সংগ্রামের সঙ্গে তখনকার সংগ্রামের মিল আছে। এখন সত্য কথা বললেই আমাদের গ্রেফতার করে, নির্যাতন করে। বুদ্ধিজীবীরা কথা বলছেন না। ঠিক তখনো আমাদের তথাকথিত কিছু বুদ্ধিজীবী মধ্যবিত্ত পেশাজীবী মানুষ কথা বলতেন না। আসাদের শার্ট তাদের কথা বলার সেই অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। আসাদ আজকের সময়ে আমাদের কাছে প্রেরণা। গণতন্ত্র রক্ষায় আসাদের মতো জীবন উৎসর্গ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা গঠন করতে চেয়েছিলাম তা পারিনি। সাম্যের ওপর ভিত্তি করে একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছিলাম সেটাও সম্ভব হয়নি। এ দুটি বিষয় সরকার অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আজকে গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে, ধনীরা আরও বড়লোক হচ্ছে। আজকে আমরা দেখছি যে মানুষটি ছেঁড়া জুতা পরে ঘুরতো সে আজকে দামি দামি গাড়িতে চড়ছে। যার মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, আজ তারা বিল্ডিং করেছে। এখান থেকে আমাদের বের হতেই হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রত্যেকটা দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসে যে চুরিটা করেছেন সেটা বন্ধ করলে তো এই দামটা কমিয়ে নিয়ে আসা যেত।