আওয়ামী লীগ সরকারের ঘোষিত উন্নয়ন কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সরকারের উন্নয়নকে ‘থুতু দিয়ে জোড়া লাগানো উন্নয়ন’ বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।

আজ বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে বিএনপি।

রিজভী বলেন, তথাকথিত উন্নয়নের নামে প্রধানমন্ত্রী আপনি এবং আপনার পরিবারের ঘনিষ্ঠজনকে লুটপাট করার সুযোগ দিয়েছেন। তারা গরিব মানুষের জমিজমা আর সম্পদ দখল করেছে। তাছাড়া ডামি সরকারের গণবিরোধী নীতির কারণে জ্বালানি তেল, পানি, বিদ্যুৎসহ সব জিনিসের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।

রিজভী বলেন, গ্রামে বিদ্যুৎ শুধু যায়, আসে না। কখন আসে তার কোনো ঠিকানা নাই। গ্রামে যারা ঈদ করতে গিয়েছিলেন তারা এসে অনেকে বলেছেন যতটুকু আইপিএসের বিদ্যুতের ব্যাকআপ দরকার সেটুকুও পায় না। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ আসে আবার চলে যায়। ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর আধা ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ আসে তারপর আর খোঁজ পাওয়া যায় না। আপনারা দেখেছেন এই ঈদে ঢাকায় গ্যাসের অভাবে মানুষ রান্না করতে পারেনি। বাড়িতে বাড়িতে মাংস নষ্ট হয়ে গেছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে। ফ্রিজ চলে না বিদ্যুতের জন্য। আর গ্যাসের জন্য জ্বলে না আগুন। যে অহংকার করে প্রধানমন্ত্রী তার উন্নয়নের কথা বলেন, সে উন্নয়ন হলো কাগজ যেমন থুতু দিয়ে জোড়া লাগানো হলে যেমন জোড়া লাগে, ঠিক শেখ হাসিনার উন্নয়নও সেরকম। যার কারণে ধপাস করে শেখ হাসিনার উন্নয়ন পড়ে গেছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে আবার নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়। এ সময় আমার মা জেলে কেন শেখ হাসিনা জবাব চাই, গ্যাসের দাম বাড়ল কেন শেখ হাসিনা জবাব চাই, তেলের দাম বাড়লো কেনো শেখ হাসিনা জবাব চাই, পানির দাম বাড়ল কেন শেখ হাসিনা জবাব চাই বলে নেতাকর্মীরা স্লোগান দেয়।

রিজভী বলেন, ওয়াসার পানি নোংরা ও কীটপতঙ্গে ভরা ময়লা পানি। এক বছর আগে জনগণ ওয়াসার এমডিকে ঘেরাও করেছিলেন। তাকে ওয়াসার পানি খেতে দেওয়া হয়েছিল, সে পানি ওয়াসার এমডি খায়নি। যে ব্যক্তি পানির দায়িত্বে তিনি যদি এই পানি না খান তাহলে সাধারণ মানুষ কেনো খাবে?

তিনি বলেন, বেনজিরের পরিবার দেশের ভেতরে এত টাকা আর দেশের বাইরে কত টাকা পাচার করেছে সেটা আমরা জানি না। একজন সরকারি কর্মকর্তার বেতন কত? তার বেতন হয়তো ৮০/৯০ হাজার টাকা ছিল। তাহলে তার সন্তানদের নামে এত ফ্লাট, বাড়ি, জায়গাজমি কোথায় থেকে হলো প্রধানমন্ত্রী? কারণ তথাকথিত উন্নয়নের নামে আপনি সুযোগ করে দিয়েছেন বেনজিরদের এবং আপনার ঘনিষ্ঠজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, এত পচা পানি সরবরাহের পরেও ৭% পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। আজকে মিছিলের যে আওয়াজ তুলেছেন তা ন্যায় সঙ্গত। এটি জনগণের দাবি, আমরা জনগণের পক্ষে, আমরা ন্যায়ের পক্ষে, আমরা অবাধ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে। যেগুলো শেখ হাসিনা কেড়ে নিয়েছেন। আপনাদের প্রতি আহ্বান, আমাদের রাজপথে আরও জোরালোভাবে নামতে হবে। আমাদের হয়তো গুলি করবে, গুম করবে ও ক্রসফায়ার দেবে, কিন্তু তবুও আমাদের মিছিল থামালে চলবে না যতক্ষণ না শেখ হাসিনার রাজ সিংহাসন রাস্তায় উল্টে না পড়ে।

বিক্ষোভ মিছিলে এ সময় আরও অংশ নেন, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহঅর্থনৈতিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি জাকির হোসেন সিদ্দিকী, ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক, যুবদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েল, বিএনপি নেতা ডা. তাজুল ইসলাম লোহানী, সঞ্জয় দে রিপন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়াল, মৎস্যজীবী দলেল যুগ্ম আহবায়ক ওমর ফারুক পাটোয়ারি, কবির উদ্দিন মাস্টার, উত্তরের আহবায়ক আমির হোসেন, যাত্রাবাড়ি থানা বিএনপি নেতা শিপন খানসহ কয়েকশ নেতাকর্মী।