সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রকে সংকটে ফেলে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার (৩০ জুলাই) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আশুলিয়া থানা সংলগ্ন শহীদের মরদেহ পোড়ানোর প্রতিবাদে ‘নারকীয় আশুলিয়া’- স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গত দেড় দশকের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে স্বৈরাচার এদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শহীদ হয়েছেন শ্রমজীবি মানুষ। বিশেষ করে এই সাভার-আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল, হত্যার পরে লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। লাশের সাথে এমন বর্বরতা, লাশের সাথে এমন নির্মমতা, মনে হয় কারবালার যে নৃশংসতা তাকেও হার মানিয়েছে।

এ সময় তারেক রহমান আরো বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছর জুলাইয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলনে শ্রমজীবী মানুষের হয়তো সরাসরি কোনো স্বার্থ জড়িত ছিল না। কারণ, তারা কোনো সরকারি চাকরির আশা করেনি। তাহলে প্রশ্ন আসে পোশাক কারখানার শ্রমিক, রিকশা চালক, দিনমজুর, ভ্যানচালক, অটো রিকশা চালক, ট্রাকচালক, হেলপার, দোকান কিংবা রেস্তোরা কর্মী, অথবা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ কেন সেদিন রাজপথে নেমেছিল? একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি একটি কারণ খুঁজে পাই, এর কারণ একটাই, দেশের সকল শ্রেণিপেশার মানুষ, দেশপ্রেমী গণতন্ত্রকামী জনগণ বিশ্বাস করেছে, ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্ট যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকে, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা, কেউ তাদের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার ফেরত পাবে না। কারো কোনো ন্যায্য দাবি আদায় হবে না। দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রকামী জনগণ বিশ্বাস করেছিল সেদিন যে, ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে সক্ষম হলে দেশের সার্বভৌমত্ব ভূলুণ্ঠিত হবে এবং এ কারণেই ফ্যাসিস্টদের সেই স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষ নির্দ্বিধায় মৃত্যুকে সাহসের সাথে সেদিন আলিঙ্গন করেছিল।

অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, সকল শহীদের রক্তের বিনিময়ে পতিত, পলাতক, পরাজিত, বিতাড়িত, ফ্যাসিবাদী অপশক্তি, রাষ্ট্র রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ নিতে ওৎ পেতে রয়েছে। সরকারের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্তে দেশের গণতন্ত্র উন্নয়নের যাত্রা বা পথকে সঙ্কটে ফেলে দিতে পারে। দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কাজেই এ ব্যাপারে আমাদের সকলকে বিশেষ করে সরকারকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, থাকা প্রয়োজন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের সর্বস্তরের জনগণ কয়েকজন মানুষের হাতে রাষ্ট্র্রীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য দেড় দশক ধরে আন্দোলন অব্যাহত রাখেনি কিংবা জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানেও শহীদ হননি। জনগণ রাষ্ট্রে ও সরকারে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদকে হটিয়েছে, জীবন উৎসর্গ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘সুতরাং সরকারের যখন যারাই থাকুন, কেউ সরকার পরিচালনা করতে চাইলে তাদের অবশ্যই নাগরিকদের কথা শুনতে হবে। প্রত্যেক নাগরিকের আশা-ভাষা বুঝতে হবে। বিএনপি জনগণের এই রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ হটিয়ে জনগণ অন্তর্র্বতী সরকারের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার অর্পণ করেছে। অর্ন্তবর্তী সরকারের একটি অংশ নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন, স্থানীয় সরকার বা জাতীয় সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনপি জনগণের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু এইসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অন্তর্র্বতী সরকার অগ্রধিকার ভিত্তিতে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারছে কি-না তা একটি বিরাট প্রশ্ন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতার দায়িত্ব পেলে সাভার আশুলিয়া কিংবা অন্য কোনো সুবিধাজনক এলাকায় শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষের আত্মত্যাগের সম্মানে একটি বিশেষ স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে।’

ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হোসান খান, বিএনপির সহ পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা: সালাউদ্দিন বাবু।

আরো উপস্থিত ছিলেন আশুলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল গফুর, ঢাকা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান, যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মন্ডল, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান মোহনসহ ঢাকা জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয় এবং আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।