বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সারা দেশের মানুষ আজ ক্ষোভে ফেটে পড়ছে। সরকার খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায়, চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে, প্রতারনা করে, জনগনকে ভুল বুঝিয়ে, আইনের ভুল ব্যাখা দিয়ে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করতে চায়।
সোমবার (দোসরা অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে সরকারের পদত্যাগসহ খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবি আদায়ে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সমাবেশে এ অভিযোগ জানান তিনি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী ও গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়াকে এই অনির্বাচিত ও অবৈধ সরকার হত্যা করতে চায়। মিথ্যা প্রতারণা করে জনগণকে ভুল বুঝিয়ে, আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তাকে বিনা চিকিৎসায় সরকার হত্যা করতে চায়। এরা (সরকার) আসলে কাপুরুষ। এরা ভীতু। এরা জানে যে, খালেদা জিয়া যদি সুস্থ হয়ে যান, যদি আবার জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন তাহলে দেশনেত্রীর ডাকে কোটি মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। তাদের তখতে তাউস ধ্বংস হয়ে যাবে।
সরকারের পদত্যাগ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির একদফা দাবিতে এই সমাবেশ হয়। দুপুর ১২টা থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষক দলের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। দুপুর ২টার মধ্যেই নয়াপল্টনের সড়কসহ আশপাশের এলাকায় হাজারো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অনেক নেতাকর্মীকে কৃষকের সাজে দেখা যায়। তারা মাথায় টুপি, হাতে কাস্তে ও ধান নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহিদ জিয়া দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার পর দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে দুটি শিশু সন্তানসহ পাক বাহিনী আটক রাখে। বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন খালেদা জিয়া। এই কথা বললে তাদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) গায়ের মধ্যে আগুন জ্বলে। কারণ তারা তো মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তারা তো সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভাতা খেয়েছিল। বাস্তব কথা বলছি। অনেকের কষ্ট হতে পারে, কিন্তু কথাটা সত্য।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ সারা দেশে মানুষ ক্ষোভ ফেটে পড়েছে। কারণ এই অবোধ সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দী করে রেখেছে। তার মুক্তির বিষয়ে ভূল ব্যাখ্যা করে যাচ্ছে সরকার। এরা কাপুরুষ। এরা জানে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি হয়ে চিকিৎসা করে সুস্থ হলে তাদের ক্ষমতার মসনদ ভেঙে পড়বে।
দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জানিয়ে বলেন, তারা তো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। বরং তারা পাকিস্তানের সরকারের ভাতা খেয়েছিল।
সরকার ২৫ হাজার কোটি টাকা লুট করতে সহযোগিতা করে আর ২৫ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে তারা একজন কৃষককে কোমরে দড়ি বেঁধে ধরে নিয়ে যায় এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এরা একটা লুটেরাদের সরকার। এরা লুট করে টাকা পাচার করে কানাডায় বেগমপাড়া বানিয়েছে।
এখন কৃষকদের পক্ষ থেকে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা বলেছি, কৃষকদের ভর্তুকি দিতে হবে। কিন্তু তারা সব জায়গায় ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। শ্রমিকরা তার নায্যমূল্য পায় না। তারা কাউকে চাকরি দেয় না। চাকরি নিতে ২০ লাখ দিতে হয়। এ সময় সমাবেশে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ করে বলেন, আমার তো মনে হয়, কারো ২০ লাখ টাকার নিচে চাকরি হয়নি!
বিএনপির এই নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নানা অজুহাত দেখাচ্ছে সরকার, যখন তিনি ( প্রধানমন্ত্রী) কানের চিকিৎসা নিয়েছেন, তখন কি কোনো অজুহাত ছিল? এরা বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ হোক চায় না। সব কিছু দখল করে রেখেছ। তারা কোনো বিরোধী দল চায় না। তারা সব নিজেদের মত করে লুটে নিচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী সমালোচনা করে তিনি বলেন, শুনেছি শিক্ষামন্ত্রীর এলাকায় তার লোকেরা ৬ হাজার কোটি টাকার বালু খেয়ে ফেলেছে। কি আশ্চর্য। শিক্ষার অবস্থা!
সরকারের প্রতি কুটুক্তি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আগে বলত ২০ টাকার তেল খেয়ে স্বর্গে যাবো গো। এখন বলতে হয় আমরা কি উড়াল সেতু, টার্মিনাল খেয়ে স্বর্গে যাবো গো? এ দেশের মানুষ তার সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতে বাঁচতে চায়। তারা দুর্নীতির উন্নয়ন চায় না।
আজ তাদের গাঁয়ে আগুন লেগেছে, তারা সব কূটনৈতিক নন্স ভুলে পিটার ডি হাসকে নিয়ে যা তা বলছে, কিছু টেলিভিশন তার পক্ষ নিয়ে কথা বলে যাচ্ছে। এরা কি ভুলে গেছে? দেশের কত মানুষ ও সন্তান সেখানে কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে।
একটি খবর শুনেন, এখন নাকি রেমিটেন্স আসা কমে গেছে। কারণ, যারা কষ্ট করে টাকা কামায় তারা এদেশে টাকা পাঠানোয় নিরাপদ মনে করছে না।
এ সময় কৃষকদলের সভাপতি হাসান জারিফ তুহিনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা ফরহাদ হালিম ডোনার, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রমুখ।