সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র সাম্প্রতিক সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় ঢাকাসহ সারাদেশে মামলা হয়েছে ৭৩৬টি। এসব মামলায় সারাদেশে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত ১১দিনে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল পুলিশ, র‌্যাব ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতারের এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ২০৭টি। নতুন করে কোনো মামলা হয়নি। আগের এসব মামলায় ২ হাজার ২৮৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গতকাল নতুন করে ২৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৩৬-এ। এর বাইরে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে ২৯০ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৭১ ও ঢাকার বাইরে ২১৯ জন।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে নাশকতার অভিযোগে শেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে মোট ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরী থেকে ২৭ ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মামলায় ১১ দিনে চট্টগ্রামে মোট ৮৪৭ জন গ্রেফতার হলো।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শেষ ২৪ ঘণ্টায় নগরীতে অভিযান চালিয়ে ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ১৯টি মামলায় ৪৭৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নতুন করে আকবর শাহ থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭০-৭৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা থেকে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম জেলার ১১টি মামলায় ৩৭১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সহিংসতার মামলায় রংপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম মিজুসহ আরো ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে ১৪টি মামলায় বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টির কর্মীসহ ১৯১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন ও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম জানান, পুলিশের চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে রংপুর নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এতে জেলা বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম মিজু, মোনায়েম হোসেন ফারুকসহ চারজনকে এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর বাইরে সিলেটে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর রাজশাহীতে নতুন মামলা না হলেও নতুন করে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৯ জনকে। এর মধ্যে রাজশাহী মহানগরে গ্রেফতার হয়েছে ৩৩ ও জেলায় ছয়জন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মো. জামিরুল ইসলাম।

এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদারকে শুক্রবার রাতে এবং সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে শনিবার রাতে হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

পুলিশের বরাত দিয়ে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় সব মিলিয়ে শুক্রবার পর্যন্ত ৭৩৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজারের বেশি।