পৌষের বিদায়ক্ষণ আজ। বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশে পৌষের শেষ দিনটিতে পুরান ঢাকাবাসী সাকরাইন পালন করে থাকে। প্রায় সব বাসার ছাদে উড়ছে রঙ-বেরঙের ঘুড়ি। নীল আকাশজুড়ে ঘুড়ির সমারোহ। পাশেই সাউন্ডবক্সে বিকট শব্দে বাজছে বাংলা-হিন্দি গান। গানের তালেতালে নৃত্য করছে উঠতি বয়সী ছেলেরা। মাঝেমধ্যেই বিকট শব্দে ফোটানো হচ্ছে আতশবাজি। রাতে ফানুস উড়ানোরও আয়োজন রয়েছে। বাংলা পৌষ মাসের শেষ দিন সাকরাইন উৎসবকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয়েছে এসবের।

সাকরাইন উৎসবের ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, ‘সাকরাইন’ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ সংক্ৰাণ থেকে এসেছে। যার আভিধানিক অর্থ হলো ‘বিশেষ মুহূর্ত’। অর্থাৎ বিশেষ মুহূর্তকে সামনে রেখে যে উৎসব পালিত হয় তাকেই বলা হয়
সাকরাইন। এই সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনেক দেশেই এই উৎসব পালন করে। তবে ভিন্ন ভিন্ন নামে। বাংলায় দিনটি পৌষ সংক্রান্তি এবং ভারতীয় উপমহাদেশে মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত।

ইতিহাস থেকে আরো জানা যায়, ১৭৪০ সালের এই দিনে মোঘল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি উড়ানো হয়। সেই থেকে এই দিনটি কেন্দ্র করে বর্তমানে এটি একটি অন্যতম উৎসব ও আমেজের পরিণত হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ না রেখে সকলে এই উৎসব পালন করে থাকেন। দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই উৎসব পালন করেন পুরান ঢাকাইয়ারা।

পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, নবাবপুর, শ্যামবাজার, ধূপখোলা, শাখারী বাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মী বাজার, ফরাশগঞ্জ, সদরঘাট, গেন্ডারিয়া, নারিন্দা, লালবাগ, চকবাজার, মুরগিটোলা ও ধোলাইখাল এলাকা জুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে সাকরাইনের আমেজ।

এসব এলাকার দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে রং-বেরঙের ঘড়ি। এসব ঘুড়িরও রয়েছে বাহারি সব নাম। চোখদার, রকদার, গরুদার, ভোমাদার, কাউঠাদার, ফিতালেঞ্জা, একরঙা, চানতারা, সাপঘুড়ি, প্রচাপতি, প্যাঁচা ও বাক্সসহ নানান নামের ঘুড়ি পাওয়া যাচ্ছে এসব দোকানে।

উল্লেখ্য, সাকরাইন উৎসব শুরু হয় দুপুরের পর থেকে। প্রায় সারা রাত ব্যাপী চলে নানা আয়োজন। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় সময় থাকে বিকেল ও সন্ধ্যায়।