আন্দোলনের নামে দেশের একজন মানুষের ওপরও হামলা মেনে নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার (৬ই নভেম্বর) সকালে  রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের কথা ভুলে না গিয়ে, এর পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার পরিবারগুলোর খোঁজ নিতে তাদের কাছে গেলে তারা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। বলতে থাকেন তাদের মনের মধ্যে জমানো সব ক্ষোভ আর স্বজন হারানোর বেদনা।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একজন স্বজন হারা। তাদের কষ্ট বুঝি। আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি। মানুষ শান্তিতে থাকবে। যেটা আমার পিতা শিখিয়ে দিয়েছিল। ১৫ই আগস্ট এর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি এদেশে আমরা বারবার দেখতে পাচ্ছি। সরকার পতনের নামে বিএনপি জামাত বারবার এদেশের মানুষকে মেরেছে, অগ্নি সন্ত্রাস করেছে ।কিভাবে তারা পারে?

তিনি বলেন, আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। কিন্তু আমরা তো কখনোই ভাবিনি মানুষকে মারতে হবে।  ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, এরপর ২০১৩ সালের পর থেকে আন্দোলনের নামে তারা মানুষ হত্যা করেছে। দেশকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তখন চরম মানবাধিকার তারা লঙ্ঘন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের আগস্টে ঘাতকের দল যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা এদেশের মানুষ হত্যার যাত্রা শুরু করে। আমার মনে হয় যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে অত্যচার করেছে, তার পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি। ’৭৫ সালের পর আমাদের সেনাবাহিনীতে ১৯ থেকে ২০টা ক্যু হয়েছে। সেনা অফিসার, বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের পরিবার লাশও পায়নি; কারণও জানতে পারেনি; বিচারও হয়নি। ফাঁসি দিয়ে, গুলি করে অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা দিনের পর দিন চলেছে এ দেশে।’

তিনি আরও বলেন, অনেক সংগ্রামের পর যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হলাম। তখনই সরকার উৎখাতের নামে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু হলো ২০০১ সালে, সেটা আবার ২০১৩, ’১৪ ও ’১৫-তে চলল। কীভাবে মানুষ পারে? গাড়িতে আগুন ধরিয়ে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করতে। কীভাবে পারে মানুষের ক্ষতি করতে, এটাই নাকি আন্দোলন? এই আন্দোলন তো কখনো দেখিনি। আন্দোলন তো স্কুলজীবন থেকেই আমরা করেছি। সেই আইয়ুব খানের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছি, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছি। কই আমরা তো স্বপ্নেও এ কথা ভাবিনি যে, সাধারণ মানুষকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে আন্দোলন করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ঘোষণা দিল অবরোধ এবং হরতাল। কিন্তু কাজ হলো কী, মানুষকে হত্যা করা। আজকে এখানে যারা উপস্থিত, এটা তো খুব সামান্য কয়েকজন। ২০১৩ সালেই তারা ৩ হাজার ৬০০ মানুষকে পেট্রোল বোমা মেরে আহত করেছে। ২০১৪ ও ’১৫ তেও করেছে।

বিএনপির আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আন্দোলন কী রকম আন্দোলন সেটা আমি জানি না। মানুষের জন্য আন্দোলন করতে হলে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে, মানুষকে নিয়ে আন্দোলন করবে। কিন্তু তারা? ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হত্যা, মেয়েদের ওপর অত্যাচার, বাড়ি দখল, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার করেছে। আবার তাদের গ্রেপ্তার করে দিনের পর দিন অত্যাচার করেছে।

dhakapost

প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ওই দুঃসময়ের কথা যেন কেউ ভুলে না যায়। প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র, মাদক, অর্থ দিয়ে তাদের বিপথে ঠেলে দিয়েছিল। ’৭৫ এর পর থেকে এগুলোই চলছিল বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগ আসার পর আমরা কিছুটা স্থিতিশীলতা আনতে পেরেছি।

অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাসের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। তারপর আওয়ামী লীগের সভাপতি বিএনপির অগ্নি-সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা নিজে শোনেন এবং তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে অনেকে কেঁদে ফেলেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রীও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।