শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হলো বাংলাদেশের। সিলেটে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ এ জিতে নিলো লঙ্কানরা। এ দিন টসে জিতে বল করতে নামে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৭৪ রান করে লঙ্কান ক্রিকেট দল। জবাবে সবকটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সর্বসাকুল্যে ১৪৬ রান করে।

শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষটিতে ১৭৪ রানের  জবাবে ব্যাট করতে শুরুতেই লিটন দাসকে হারায় লাল-সবুজের দল। তৃতীয় ওভারে ধনাঞ্জয়া ডি সিলাভা ৭ রানে ফেরান ওপেনার লিটন দাসকে। চতুর্থ ওভারে তুশারার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিকে ধসে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। সেই ওভারের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বলে যথাক্রমে ফেরান—নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। শান্ত ও হৃদয়কে বোল্ড করার পর মাহমুদউল্লাহকে ফেরান এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে।

নিজের পরের ওভারে এসে আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারকেও বোল্ড করেছেন। ১০ বলে ১১ রান আসে সৌম্যর ব্যাট থেকে। আগের দুই ম্যাচে নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি শ্রীলঙ্কার নিয়মিত অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। তবে ফেরার ম্যাচে ৯ম ওভারে জাকের আলী অনিককে ৪ রানে ফিরিয়ে ম্যাচ থেকেই বাংলাদেশকে একরকম ছিটকে দেন লঙ্কান অধিনায়ক।

সপ্তম উইকেটে শেখ মেহেদী হাসান ও রিশাদের ৩১ বলে ৪৪ রানের জুটি বাংলাদেশকে ১০০ পেরোনোর সুযোগ করে দেয়। মেহেদীর ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান। কিন্তু অষ্টম উইকেটে তাসকিন-রিশাদের ২১ বলে ৪১ রানের জুটি ম্যাচে উত্তেজনা ফেরায়। লঙ্কান বোলারদের ওপর ছক্কার ঝড় বইয়ে ২৬ বলে ফিফটি তুলে নেন রিশাদ। তাঁর ৫৩ রানের ইনিংসে ছিল ৭টি ছক্কা। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এটাই বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কা। ২১ বলে ৩১ রান করেছেন তাসকিন।

শ্রীলঙ্কার হয়ে ৫ উইকেট নেওয়া এ ম্যাচের আগে তুশারা খেলেছেন সাতটি টি-টোয়েন্টি। নামের পাশে উইকেট ছিল ৬ টি। সেরা বোলিং গত বছরের সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমসে, আফগানদের বিপক্ষে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ইকোনমি ছিল ১০ ছুঁই ছুঁই। বাংলাদেশের বিপক্ষে এ ম্যাচে তাঁর ইকনোমি ৫.০০।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শরিফুল ইসলাম-তাসকিন আহমেদদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে আজ ব্যাটিং ইনিংসের শুরুর দিকে কিছুটা চাপেই ছিল লঙ্কানরা। টাইগার বোলারদের সামলে প্রথম ৩ ওভারে ১৮ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা। তবে চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই তাসকিনের শিকারে পরিণত হন ওপেনার ধনঞ্জায়া ডি সিলভা।

চতুর্থ ওভারে তাসকিনের করা প্রথম বলেই সৌম্য সরকারের মুঠোবন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরেন লঙ্কান এই ওপেনার। আউট হওয়ার আগে ১১ বল খেলে তিনি করেছেন ৮ রান। এদিকে ডি সিলভা ফেরার পর ক্রিজে কুশল মেন্ডিসের সঙ্গী হন কামিন্দু মেন্ডিস। আগের ম্যাচে এই মেন্ডিস জুটিই লঙ্কানদের এনে দিয়েছিল লড়াকু পুঁজি। তবে আজ আর ইনিংস বড় করতে পারেননি কামিন্দু মেন্ডিস।

অষ্টম ওভারে রিশাদের করা চতুর্থ বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে শরিফুলের মুঠোবন্দী হন কামিন্দু। আউট হওয়ার আগে ১২ বলে ১২ রান করেছেন তিনি। এদিকে দলীয় ৫২ রানে কামিন্দু ফেরার পর ক্রিজে কুশল মেন্ডিসের সঙ্গী হন দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফেরা লঙ্কান অধিনায়ক হাসারাঙ্গা। তবে প্রত্যাবর্তনের দিনে নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি।

১ চার এবং ১ ছয়ে ১৩ বিওলে ১৫ রান করে মোস্তাফিজের বলে শরিফুলের মুঠোবন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। এরপর চারিথ আসালাঙ্কাকেও প্যাভিলিয়নের পথ দেখান শরিফুল। এদিকে একপ্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও অপরাপ্রান্তে লঙ্কানদের রানার চাকা ঘুরিয়েছেন মেন্ডিস। টাইগার বোলারদের সামলে ৩৫ বলেই ফিফটি তুলে নেন তিনি। এরপর এগোচ্ছিলেন শতকের দিকে। তবে তাকে সেঞ্চুরি হাঁকাতে দেওননি তাসকিন। টাইগার এই স্পিডস্টারের বলে সৌম্যর মুঠোবন্দী হয়ে ৫৫ বলে সমান ৬টি করে চার ও ছয়ে ৮৬ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি।

এদিকে দলীয় ১৪০ রানে মেন্ডিস ফেরার পর শেষদিকে ক্রিজে এসে ৯ বলে ১৯ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন দাসুন শানাকা। টাইগারদের হয়ে বল হাতে আজ সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন রিশাদ এবং তাসকিন।