সিলেটে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আাসা পাহাড়ি ঢলের কারণে আবারও বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক দিনের ব্যবধানে সিলেটের চারটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেখানে আবারও বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। যে কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রোববার (১৬ জুন) দুপুর ১২টায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গোয়াইন, সারী, পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
গোয়াইনের পানি ১০.৮২ মিটার সারী নদীর পানি ১২.৩৫ মিটার পিয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩.০০ মিটার এবং সারী নদীর বিপৎসীমার ১২.৬২ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়াও মেঘদূত এপস-আইএমডি তথ্য অনুযায়ী, গোয়াইনঘাট সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ‘ওয়েস্ট জৈন্তা হিলস’ ও ‘ইস্ট খাসি হিলস’ জেলায় আগামী ১৯ জুন ৪৬১ মিলিমিটার ও ২০ জুন ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
গোয়াইনঘাট, সারী, পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি ও বৈরী আবহাওয়া অব্যাহত থাকায় উপজেলা সদর হতে জেলা সদরে যাতায়াতের তিনটি রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থানে পানি উঠেছে ও তলিয়ে গেছে। গোয়াইনঘাট- রাধানগর-জাফলং সড়কে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সরী টু গোয়াইনঘাট সড়কে আংশিকভাবে যানবাহন চলাচল অব্যাহত আছে। গোয়াইনঘাট থেকে সালুটিকর রাস্তায় ব্রিজ নির্মাণকাজ চলমান থাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে সিলেট শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৩টি ইউনিয়নে নিয়োজিত ১৩ জন সরকারি ট্যাগ অফিসার সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকি করছেন। জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ৪৭টি উদ্ধারকারী নৌকা (রেসকিউ বোট) পানিবন্দিদের উদ্ধারে নিয়োজিত রয়েছে।
বন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলায় ২৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়ে ৯ হাজার ৫৫০টি পরিবার পানিবন্দি আছে। ৭০০ হেক্টর কৃষি জমি পানিতে নিমজ্জিত আছে। যেসব এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবিত হচ্ছে সেসব এলাকার ঘরবাড়ি, বাজার ও দোকানসমূহ থেকে জানমাল নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া ও জনগণকে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করে বলা হচ্ছে।
উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। বন্যায় দুর্গত মানুষের চিকিৎসার জন্য ১০টি মেডিকেল টিম ও পানিবন্দিদের উদ্ধারের জন্য ৪৭টি নৌকা প্রস্তুত রয়েছে।
দুর্গত এলাকার মানুষজন বলছেন, আগের বন্যার ভয়াবহতা কমতে না কমতেই আবারও ভারি বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। আগামীকাল ঈদ। ঈদের কেনাকাটা তো দূরের কথা, ঘরেই যা খাবার ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। এখন তাদের অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে। প্রশাসনের পক্ষ হতে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ত্রাণ সহয়তা বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
এত বেশি বিপাকে পড়ছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। কিছু গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
উপজেলার ঝারিখাল গ্রামের পানিবন্দি কালা মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার উপহারের ঘরে ছেলে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করি। দুই দিন ধরে বউ সন্তানদের নিয়ে পানিবন্দি হয়ে আছি। অসুস্থ হয়ে কাজ কাম করতে পারি না, ঘরে যা খাবার ছিল শেষ হয়ে গেছে। কালকে কোরবানির ঈদ কী করমু, গরিবের ও অসহায়ের ঈদ নাই। আর একটু পানি বাড়লে ঘরে থাকাও সম্ভব হইতো না, ঈদ দিয়া কিতা করমু।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, গত চার দিনের টানা বর্ষণে এবং ভারতের মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ হয়েছে। বর্তমানে গোয়াইনঘাট টু রাধানগর জাফলং সড়ক পানিতে প্লাবিত হওয়া সারী গোয়াইনঘাট সড়কে পানি ওঠায় এবং গোয়াইনঘাট টু সালুটিকর সড়কে ব্রিজ নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় উপজেলা সদরের সঙ্গে সিলেটে শহরের যান চলাচলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও হাওরাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে প্রায় ২৩৫ বর্গ কিলোমিটার এরিয়া ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। তা ছাড়া সেখানে ১৩ জন ট্যাগ অফিসার ও ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সমন্বয়ে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য নিয়োজিত আছে। উদ্ধার কার্যক্রমের ৪৭ নৌকা রয়েছে। তা ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের জন্য শুকনো খাবারের পাশাপাশি রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহা আগামীকাল এরইমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি উদ্ভব হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা যারা আছেন, তারা যার যার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন এবং বন্যায় মানুষের জন্য চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বন্যার পানি বাড়ছে- এমন খবর পাওয়া গেছে অতিবৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া অব্যাহত রয়েছে।