আগামী ২৪ ঘন্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমতে থাকলেও, মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। এদিকে, হাকালুকি হাওর পরিবেষ্টিত কুলাউরা, জুড়ি ও বড়লেখার নিম্নাঞাচলের পানি না নামায় ভোগান্তিতে রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুরের নিম্নাঞাচল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত এক মাসে তৃতীয় দফা বন্যা মোকাবেলা করছেন সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মানুষ। গত দু’দিন পানি বাড়ার পর, কিছুটা কমতে শুরু করেছে সুরমা নদীর পানি। শুক্রবার বিকেল থেকে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার এবং সিলেট পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে স্থিতিশীল অবস্থায় আছে কুশিয়ারা নদীর পানি। শনিবার সিলেটে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলেও, তাতে পানি বাড়ার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সুনামগঞ্জে অব্যাহত রয়েছে বন্যার পানি কমা। বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল না থাকায় সুরমা, যাদুকাটা, পাটলাই, রক্তি নদীসহ অন্যান্য নদ নদীর পানিও কমেছে। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ছাতক পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে এখানকার মানুষজন। তবে জেলার কিছু নিম্নাঞাচল এখনো প্লাবিত রয়েছে।
মৌলভীবাজারের মনু, দলই ও কুশিয়ারা একাংশের পানি কমলেও হাকালুকি হাওর পরিবেষ্টিত তিন উপজেলা কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখার নিম্নাঞাচলের পানি না কমায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এখানকার লক্ষাধিক মানুষ। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন ঘর থেকে বের হতে পারছে না। কুশিয়ারা নদী সিলেট অংশের পানি এখনো স্থিতিশীল থাকায় মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের পানি সেদিক দিয়ে নামতে পারছে না।
এদিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা সোমবার (৪ জুলাই) পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
শনিবার যমুনার পানি বিভিন্ন স্থানে ১ থেকে ৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি দু’টি স্থানে বেড়েছে ৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। গঙ্গার পানি বিভিন্ন স্থানে ৩২ থেকে ৩৮ সেন্টিমিটার বেড়েছে। আর পদ্মার পানি বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে ৬ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত।
পাউবো জানিয়েছে, তাদের পর্যবেক্ষণাধীন বিভিন্ন নদ-নদীর ১০৯টি পয়েন্টের মধ্যে শনিবার পানির সমতল বেড়েছে ৫৮টিতে, কমেছে ৪৭টিতে, আর অপরিবর্তিত আছে চারটি পয়েন্টের পানির সমতল।
এখন পাঁচটি নদীর পানি ছয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হাতিয়া পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, সুরমার পানি কানাইঘাটে প্রবাহিত হচ্ছে ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, পুরাতন সুরমার পানি দিরাইতে প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
এছাড়া কুশিয়ারার পানি অমলশীদে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও শেওলায় ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কলমাকান্দা পয়েন্টে সোমেশ্বরীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।