মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আবারও উত্তপ্ত হওয়ায় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা সর্তক রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

শনিবার (২৭শে জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি এ তথ্য জানান। এদিন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের চার সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে ক্ষমতাসীন জান্তার সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এ রাজ্য ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। উদ্বিগ্ন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ জানান, মিয়ানমারের শরণার্থীদের বিষয় নিয়ে ব্রিটিশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান, এর কোনো বিকল্প নেই।

“এটিই একমাত্র স্থায়ী সমাধান। সেটা আমি তাদের বলেছি, তারা আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন;” যোগ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন উদ্যোগের ওপর এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, “তবে আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছি। আমরা মনে করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সঙ্গে আছে।”

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যদি মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে বলে উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ।

তিনি উল্লেখ করেন, যেসব বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা এসেছে, তাদের কারণে বাংলাদেশে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বলেন, “আমাদের এখানে নিরাপত্তা ও পরিবেশগত সমস্যাসহ বহুমাত্রিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে আমরা ভারাক্রান্ত। প্রতি বছর ৩৫ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করছে।”

“সেসময় মানবিক কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা মনে করি মিয়ানমারের পরিস্থিতি উত্তরণের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব;” বলেন ড. হাছান মাহমুদ।

আরেক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিছুদিন আগে ন্যাম সম্মেলনে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। সেখানেও আলোচনা হয়েছে।”

ফিলিস্তিন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতের (আইসিজে) রায় সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আইসিজে যে রায় দিয়েছে, সে রায়কে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার আপিলকে সমর্থন জানিয়েছি।”

“ফিলিস্তিনে যে গণহত্যা হয়েছে; তা আইসিজের রায়ে বলা হয়েছে। সেখানে গণহত্যা বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। ফিলিস্তিনে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ হচ্ছে; তা বন্ধ করার ক্ষেত্রে এই রায় সহায়ক হবে;” উল্লেখ করেন ড. হাছান মাহমুদ।

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও গভীরতর করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সফরে এসেছে প্রতিনিধি দল।

বাংলাদেশের পার্লামেন্টের সঙ্গে যাতে যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার বিষয়টিও তাদের উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি; জানান হাছান মাহমুদ।

ড. হাছান বলেন, “বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ করতে আমি তাদের অনুরোধ করেছি। বিশেষ করে বেসরকারি উদ্যোক্তা, যারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার সামর্থ্য রাখে তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের একটি বড় উন্নয়ন অংশীদার এবং দেশটির অনেক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আছে। বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ হলো যুক্তরাজ্য।