বাংলাদেশের বান্দরবান সীমান্তের ওপাড়ে মিয়ানমার থেকে মর্টারশেল নিক্ষেপ ও গুলির ঘটনাসহ দেশটির অসৌজন্য আচরণের বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২০শে সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিক থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইতালি, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করেছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব খুরশেদ আলম।

প্রায় বেশিরভাগ দেশের কূটনীতিকরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে অংশ নিলেও ছিল না চীনের কোনো প্রতিনিধি।

এসময় তিনি বলেন, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মিয়ানমারকে আগে বলা হয়েছে ব্যবস্থা নিতে। পরে আসিয়ানকে বলা হয়েছে। আজকে রাষ্ট্রদূতদেরকে বলা হয়েছে এটা চলতে দেয়া যায় না।  খুরশেদ আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিয়ে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে ফায়দা নিতে চায় মিয়ানমার। ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে মিয়ানমার গোলা বা মর্টার শেল বাংলাদেশে পড়ার কথা না। মিয়ানমার অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে কোন ফায়দা যেন লুটতে না পারে রাষ্ট্রদূতদেরকে বলা হয়েছে’।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ধৈর্য নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে তাতে প্রশংসা করেছে রাষ্ট্রদূতরা। কূটনৈতিক চ্যানেলের পাশাপাশি নেপিদোর সাথেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান গোলাগুলির ঘটনায় বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং এখন অবদি এ ইস্যুতে ঢাকার অবস্থান বিদেশি মিশনগুলোর কূটনীতিকদের জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কূটনীতিকরা বিষয়গুলো তাদের নিজ নিজ দেশের সরকারকে জানাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

মিয়ানমার ইস্যুতে ঢাকার অবস্থানে দূতরা প্রশংসা করেছেন জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আমরা সবাইকে (দূতরা) বলেছি। মোটামুটি সবাই এসেছিল। তারা আমাদের অবস্থানের প্রশংসা করেছেন। আমরা যে ধৈর্য দেখাচ্ছি এবং কোনো উসকানিতে পা দিচ্ছি না, এটাকে তারা প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, তাদের ক্যাপিটালে তারা বিষয়টি জানাবেন। যাতে ভবিষ্যতে তাদের যদি করণীয় কিছু থাকে, বিশেষ করে জাতিসংঘে কিছু করার থাকলে তা করার ব্যাপারে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।

মিয়ানমার ইচ্ছে করে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে কি না জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ইচ্ছে করে করুক বা না করুক, এটা এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে ফেলবে। কাজেই মিয়ানমার সরকারকে এটা বুঝতে হবে। তাদের বুঝতে হবে বাংলাদেশ হলো পশ্চিমে, দক্ষিণে আরাকান আর্মি। তাদের গোলা কোনোভাবেই বাংলাদেশে আসার কথা নয়।

তিনি বলেন, গোলা তো পশ্চিমে আসার কথা নয়। কাজেই এটা জিয়োগ্রাফিক্যালি হয় না, যদি কেউ ইচ্ছে করে না করে। ইচ্ছাপূর্বক আমাদের এ কনফ্লিকটে (দ্বন্দ্বে) জড়ানোর যে প্রচেষ্টা সেটা আমরা বলেছি, আমরা এটাতে জড়িত হবো না। আমরা তাদের (দূতদের) অবহিত করলাম। রাষ্ট্রদূতদের বলেছি, আপনারা যে অ্যাকশন নেওয়া উচিত বলে মনে করবেন, সেটার যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করবে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে খুরশেদ আলম বলেন, আমরা সর্বস্তরেই মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যাতে মিয়ানমার বুঝতে পারে এ রকম একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তাদের জন্যও বিপজ্জনক। বাংলাদেশ এটা কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে গত শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে নতুন করে গোলাগুলি শুরু হয়। ওইদিন রাত ৮টার দিকে একটি মর্টার শেল এসে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্য রেখায় পড়ে। এতে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনায় এক শিশুসহ পাঁচ রোহিঙ্গা নাগরিক আহত হন।

এ ঘটনায় রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। রাষ্ট্রদূতকে একটি প্রতিবাদলিপি দেওয়া হয়।

এর আগে কয়েক দফায় মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল ও গোলা এসে পড়ে বাংলাদেশের ভেতরে। ওইসব ঘটনায়ও মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানানো হয়।