প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোটার ও রাজনৈতিক দলের কাছে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসি দায়বদ্ধ। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় গুণগত মান নিশ্চিত করা গেলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসিকে বেগ পেতে হবেনা। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে এসব কথা বলেন সিইসি। এসময় গণফোরামের প্রতিনিধিরা আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেন। অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছে দলগুলো।

রাজনৈতিক দলের সাথে নির্বাচন কমিশনের সংলাপের দশম দিন বৃহস্পতিবার চারটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত গণফোরাম ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপের সাথে মতবিনিময় করে নির্বাচন কমিশন।

এসময় গণফোরাম নেতারা আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে মত দেন। নির্বাচনের আগে সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকার গঠনসহ করাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেয় দলগুলো। এসময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসি দায়বদ্ধ। অপশক্তি প্রতিহত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা চান তিনি।

সংলাপে দলের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, অসম্ভব সুন্দর একটি প্রস্তাব সংখ্যানুপাতিক আসন সংখ্যা বন্টন। আপনারা এসব নিয়ে কথা বলছেন না কেন। আপনারা সব কিছু কমিশনের ব্যক্তিদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। আমাদেরকেই চাপিয়ে দিচ্ছেন। সিস্টেম যদি আপনারা প্রয়োগ করতে পারেন, তাহলেতো আমাদের কাজই করা লাগবে না। আপনারা ওই গবেষণাটা করেন, আমাদের যে চলমান পদ্ধতি, পদ্ধতিটাতে যদি কোনো পরিবর্তন আনতে পারেন। যেটা আপনারা বলছেন, আরো দু’তিনটা দল থেকে এটা আসছে।

তিনি বলেন, এতে আমি খুব আকৃষ্ট হয়েছি। তাহলে আমার যে সুবিধাটা হবে, আমার না, আমার পরের প্রজন্মের যে নির্বাচন কমিশন আসবে, তাদেরকে এতোটা পরিশ্রম করতে হবে না। যদি প্রপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন হয়, সংকুচিত হয়ে যাবে-একটি হলো পেশিশক্তি, আরেকটি হলো অর্থশক্তি। আপনারা আপনাদের মঞ্চে কথা বলেন না কেন?

সিইসি বলেন, ভোটের হারের ভিত্তিতে আসন সংখ্যা বন্টরের ব্যবস্থাটা নিয়ে রাজনীতিবিদরা গবেষণা করে দেখবেন এটা আমাদের দেশের জন্য উপযোগী কি-না, আমাদের দেশের মানুসের সেন্টিমেন্টের সঙ্গে উপযোগী কি-না, সেটা আপনারা দেখবেন। এটা আপনাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব। আর আপনাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব আমাদের ওপর চাপিয়ে দেবেন না। আমাদের সমর্থন হয়তো থাকবে। কিন্তু আপনাদের উপলদ্ধি করতে হবে। আমি চাই, আপনারা আরও সরব ভূমিকা পালন করেন। আপনাদের ভূমিকা নিয়ে আমার সংশয় আছে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় সরকার থাকবে। তার সহায়তা আমার লাগবে। ইলেকশন পদ্ধতি পরিবর্তন করে যদি রাজনৈতিক সুস্থতা কিছুটা ফিরিয়ে আনা যায়, তাহলে সেটা আমার মনে হয় আপনাদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে একটা বড় অর্জন হতে পারে। আপনারা আমাদের সঙ্গে কেবল না, আপানারা নিজেরাও আলোচনা করেন। আমরা বারবার শুনছি। কিন্তু একটা সিস্টেম দাঁড় করিয়ে দেন, যেখানে সিস্টেম নিশ্চিত করবে সঠিক নির্বাচন।

বাস্তবতাকে উপক্ষো করা যায় না। সিস্টেম যদি নির্মোহভাবে কাজ করে, সেটাকে গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় সংসদকে কার্যকর হতে হবে। সেইদিক থেকে আমাদের জনপ্রতিনিধিত্বমূলক তো হতে হবে, ভারসাম্যপূর্ণ যতটা হতে পারে, সেটা কাঙ্ক্ষিত। সশস্ত্র বাহিনীসহ তিন সদস্যের রিটার্নিং কর্মকর্তার প্যানেল করার প্রস্তাবটি নতুন। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি যদি রাখার বিধান থাকে, আমরা যদি রাখতে পারি, সেটা নির্বাচনের স্বার্থে কল্যাণকর হবে।

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, প্রতিটা সংলাপে শুধু প্রত্যাশা আমাদের ওপর। দায়-দায়িত্ব সব আমাদের। আমরাই কেবল সমালোচিত হচ্ছি। সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে সততার সঙ্গে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করি তাহলে এত সমস্যা থাকে না। আমরা অবশ্যই সমালোচনার ঊর্ধ্বে না। সবার কাছ থেকে আমরা সহায়তাও পাবো না। কিন্তু আমাদের তো ভয়েস রেজ করার জায়গা নেই। ভয়েস রেজ করার জায়গা আপনাদের আছে। আপনাদের ভয়েস রেজ করতে হবে।