কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরিবার থেকে হারিয়ে যান শিরিন খাতুন ও অন্তরা বেগম নামের দুই কিশোরী। এরপর পথশিশুর পরিচয় থেকে গৃহকর্মী। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনহীন এই দুই নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে রংপুর জেলা আদালতের নির্দেশে ২০১০ সালে রাজশাহী পবা সেফ হোমে আশ্রয় পান। সেখানেই কেটে যায় জীবনের ১১টি বছর। প্রায় এক যুগ পর বিয়ের মাধ্যমে তারা নতুন জীবনে পা বাড়ালেন। শুক্রবার ধুমধাম আয়োজনে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে রাজশাহী সমাজসেবা অধিদফতরের আওতাধীন সেফহোম কর্তৃপক্ষ।

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, জেলা পুলিশ সুপার এবি মাসুদ হোসেন, পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লসমী চাকমা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীন ও রাজশাহী সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোসা. হাসিনা মমতাজ, সহকারী পরিচালক ড. আব্দুল্লা আল ফিরোজ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দুই বরের পক্ষ থেকে বরযাত্রী এসেছিলেন আরও প্রায় ৪০ জন।

সেফহোমে বিয়ের আসরের মোনাজাত শেষে ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ের ব্যবস্থা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করার জন্য রংপুর ও পঞ্চগড় আদালতে তাদের জামিন নিতে হয়। বিয়েতে দুই পক্ষের অতিথিসহ প্রায় ৩০০ মানুষকে দাওয়াত করা হয়েছিল।

৪৫ কেজি খাসির গোশত, ২০ কেজি মাছ, ২২ কেজি চালের পোলাউ, পাঁচ কেজি চালের সাদা ভাতে বিয়ের অনুষ্ঠানের অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় বলে জানান সমাজসেবা অধিদফতরের রাজশাহী আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বাবুর্চি আকবর হোসেন।

সেফহোমে গিয়ে দেখা যায়, পবা উপজেলার বায়া সেফহোমে বেশ ধুমধামে দুই নারীর বিয়ের আয়োজন করা হয়। অন্তরাকে বিয়ে করেছেন রাজশাহী নগরীর বড়বনগ্রাম দুরুলের মোড় এলাকার মো. বিপ্লব (৪২)। আর শিরিনকে বিয়ে করেছেন পবার পিল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন (৫০)। দুইজনেরই স্ত্রী মারা যাওয়ায় পরিবারের সম্মতিতে তারা বিয়ে করেন।

শিরিন খাতুনের বর ইসলাইল হোসেনের বয়স প্রায় ৫০ বছর। তিনি রাজশাহী শহরে অটোরিকশা চালান। গত তিন বছর আগে তার আগের স্ত্রী মারা গেছেন। তার বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার পিল্লাপাড়া গ্রামে। বিয়েতে তার দুই ছেলের বউ জয়া বেগম ও দিলরুবা বেগম ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছিলেন। জয়া বেগম বলেন, শাশুড়ি হিসেবে এমন একজন মানুষ পেয়ে আমরা খুশি। একই কথা বলেন অপর বউ দিলরুবা। বিয়ের দেনমোহর ঠিক করা হয় এক লাখ টাকা।

অন্তরা বেগমের বর বিপ্লবের বয়স ৪২ বছর। তার বাড়ী রাজশাহী নগরের বড় বনগ্রাম দরুলের মোড়ে। তার গরু-ছাগলের ব্যবসা রয়েছে। ১২ বছর আগে তার স্ত্রী মারা গেছেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারাও খুশি মনে ছিল বিয়ের অনুষ্ঠানে। বিয়ের দেনমোহর ঠিক করা হয় দুই লাখ টাকা।

উপ-তত্ত্বাবধায়ক লাইজু রাজ্জাকসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে সেফাহোমকে বিয়েবাড়ির সাজে সাজান। লাইজু রাজ্জাক বলেন, মেয়ে দুটি নিজের সংসারে সুখে থাকবে এই তার আনন্দ।