প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা তাঁর সরকারের প্রধান লক্ষ্য। সেবা দিয়ে জনগনের মন জয় করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি নির্দেশ দেন তিনি। আজ সোমবার (১৪ই নভেম্বর) জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়াম্যান ও সদস্যদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এসব বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভোগদখল নয়, জনকল্যাণে কাজ করতে হবে। দেশের উন্নয়ন নিয়ে অনেকে অপপ্রচার চালাচ্ছে উল্লেখ করে, তাতে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা চাইলে জনগণের সেবা দিয়ে মন জয় করতে পারেন। আর যদি চান জনগণের সম্পদ লুট করে চিরদিনের জন্য বিদায় নিতে, তাও পারেন। এটা হলো বাস্তবতা। যেহেতু জনগণ আপনাদের ওপর আস্থা রেখেছে, আপনারা সেবা দিয়ে জনগণের মন জয় করে দেশের উন্নয়নে আত্মনিবেশ করবেন, এটাই আমি চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তাকে সেটা করতে দেওয়া হয়নি। যদি সেটা করতে পারতেন তাহলে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া নয়, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বের বুকে দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থান করে নিত। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

১৫ আগস্টে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আর রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যাই। রিফিউজি হিসেবে থাকি। দেশে আসতে পারিনি। কারণ মোশতাক প্রথমে অবৈধভাবে ক্ষমতা নেয়। জিয়াউর রহমান সামরিক আইন জারি করে একাধারে সেনাপ্রধান, অপরদিকে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। খুনিদের ইনডেমনিটি দেওয়া হয়, যাতে তাদের বিচার না হয়। তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কার দেওয়া হয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুরু হয়। আর আমরা যাতে দেশে আসতে না পারি সেই নির্দেশ দেয়। এমনকি রেহানার পাসপোর্টটাও রিনিউ করে দেয়নি জিয়াউর রহমান। নিষেধ করে দিয়েছিল। ৬ বছর বিদেশে ছিলাম। পরে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশে ফিরে আসি। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। তাদের মুক্তি দিয়ে ক্ষমতায় বসায় জিয়াউর রহমান।

বিএনপির গঠনতন্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তারা নিজেরাই নিজেদের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চেয়ারম্যান করে রেখেছে। আমার মা-বাবা, ভাই হত্যার আসামি জিয়াউর রহমান। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের দল আবার এতো কথা বলে কী করে? বিএনপি ক্ষমতায় এসে আমাদের যত নেতাকর্মীকে নির্যাতন করেছে, সেই তুলনায় আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি।
খালেদা জিয়া বলেছিল, আমি নাকি প্রধানমন্ত্রী দূরের কথা, বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারব না। এখন কী হলো, ‘আসলে আল্লাহর মার, দুনিয়ার বার!’

গ্রামের মানুষও যেন শহরের সুযোগ-সুবিধা পায় সেজন্য তার সরকার নানা ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের সব মানুষ যেন উন্নয়নের ছোঁয়া পায়, আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলা করে না। আমরা জনকল্যাণমূলক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মানুষের উন্নয়নে কী কী কাজ করা যায় সেটা আপনাদের ভাবতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান। অনেকে বিভিন্ন দল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু যখন আপনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তখন আপনার দায়িত্ব সবার জন্য কল্যাণমূলক কাজ করা। প্রতিটি মানুষ যেন উন্নয়নের ছোঁয়া পায় সে ব্যবস্থাই আমরা নিয়েছি। লাখো শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। বাংলাদেশকে উন্নত করতে হবে।’

বিএনপির কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোকো যখন মারা যায় আমি তখন খালেদা জিয়ার খবর নিতে তার বাসায় গেলাম। কিন্তু তারা আমাকে বাসায় ঢুকতে দেয়নি। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা এবং একজন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তারা আমাকে অপমান করল। তারা মনের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ পুষে রাখে। কিন্তু আমাদের মনে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ নেই।’